get-fans-468x60

Saturday, November 12, 2011

সর্বযুগের সর্বাধুনিক জীবনপদ্ধতির নাম : ইসলাম

বিরুদ্ধবাদী শক্তি সর্বদাই এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। সকল পথেই বিদ্যমান তার বিপরীত ধারা। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ, ব্যাপক, পরিপূর্ণ ও সুসামঞ্জস্যশীল জীবন ব্যবস্থা ইসলামের ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম নেই। অর্থাৎ, ইসলামের চলার পথ সরল কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়; বরং পদে-পদেই পিচ্ছিল ও কণ্টকাকীর্ণ। হবেই বা না কেন? এ পথেই তো আমাদের পরীক্ষা চলছে জাগতিক জীবনের অনির্দিষ্ট দিন-রাতে। আর পরীক্ষাক্ষেত্রেই ফলাফল আশা করা কখনোই কোন সুস্থ ও জ্ঞানসম্পন্ন পরীক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। অতএব, আল্লাহর পথের পরীক্ষার্থী মুমিনেরা সে আশা করেও না; বরং দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা পায় অথবা হারায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না কখনো।
বিরুদ্ধবাদীদের যাবতীয় যন্ত্রণা এখানেই যে, মুমিনেরা কেন তাদের আসল লক্ষ্যের পানে ধাবমান? কেন তারা তাছবীহ আর জায়নামায নিয়ে মোরাকাবায় বসে-বসে ধ্যান করে না! (?) কেন তারা কবরে কবরে গম্বুজ উঁচিয়ে গাঁজার নেশায় মারফতী (?) গানে বুঁদ হয়ে থাকে না। কেন তারা ইসলামকে দেখতে চায় রাষ্ট্রব্যবস্থায়? কারণ, ইসলাম তো এ যুগে একেবারেই অচল, সেকেলে, পুরাতন, এর সংরক্ষণে হেন ত্রুটি, তেন ঘাটতি রয়েছে। অতএব যত্ত পার মসজিদে, খানকায়, ঘরের কোণায় ইসলাম মান বাধা নেই, খামাখা কেন তারে রাজনীতিতে টেনে আনছো? (আড়ালী দৃষ্টিতে-কেন আমাদের স্বার্থের গুদামে আগুন দিচ্ছো?)
বিভ্রান্তি ঘুরপাক খাচ্ছে অশান্ত বাতাসে-
‘ইসলাম আধুনিক নয় সেকেলে, একালের জন্য যোগ্যতা রাখে না’। জানা দরকার যে, আধুনিকতার সংজ্ঞা কি? ‘সংসদ’ বলে- বর্তমানকালীন, সাম্প্রতিক, হালের, অধুনাতন, নব্য ইত্যাদি। সমার্থ শব্দকোষ তার অনেক অনেক প্রতিশব্দাবলীর সমাবেশ ঘটিয়েছে। সাথে সাথে ‘চিরনতুন’, ‘চিরনবীন’ ইত্যাদি শব্দেরও অবতারণ হয়েছে।
এখন আসুন ইসলাম কীভাবে আধুনিক? গতবিকেলে তোলা টমেটো, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা থেকে শুরু করে- খবর, খবরের কাগজ, আসবাব পত্র, ঘটনাবলী নিয়ে বইপুস্তক পর্যন্ত পুরোনো হয়ে যাচ্ছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে; তারা সকলেই আধুনিক থেকে পুরাতন হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই ধারার কোন এক পর্যায়ে ফেললে ইসলাম পুরাতন। কিন্তু ইসলাম নামক পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যবস্থাকে এতটা নগন্যরূপে যারা চেনে, এতটা স্বল্পতায় যারা জানে ও তার সাথে এতটাই হীনসম্পর্ক যারা রাখে; কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব একথা বলা যে, ইসলাম তথা ইসলামী জীবন ব্যবস্থা পুরোনো, সেকেলে কিংবা আরো একধাপ এগিয়ে- যে, ইসলাম এ যুগের জন্য অচল! মূলতঃ ইসলামের জন্য আধুনিক অর্থে ‘চিরনবীন’, ‘চিরনতুন’ শব্দাবলীই সর্বাধিক প্রযোজ্য। কেননা, প্রতিটি মানব শিশুকেই জন্মের পর থেকে কোন না কোন জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়; যারা ইসলামের সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করে, ইসলাম তাদের নিকট সম্পূর্ণ নতুন; যেন আল্লাহ তা’আলা তার বা তাদের জন্যই ঠিক এই মুহূর্তে এই বিধান নাযিল করেছেন, যে মুহূর্তে তারা তা শ্রবণ ও অনুধাবন করে। আজকের আধুনিক পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশু বৃদ্ধি পেয়ে কিশোর হয়ে যৌবন-বার্ধক্য নিয়ে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে কী হবে তার করণীয় সে দিকনির্দেশনা একমাত্র ইসলামই তাকে দিতে পারে প্রতিদিনের টাটকা খবরের মত করেই এবং কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামই এই ক্ষমতা রাখে। অতএব, ইসলাম সর্বকালেই জীবন পদ্ধতিতে যুগের চাহিদা মেটাতে পারে বলে ইসলাম ‘চিরনবীন’, ‘চিরনতুন’ তথা আধুনিক।
আসুন আমরা এই চিরনবীন, চিরনতুন ইসলামকে আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে পালনে ব্রতী হই। আল্লাহ আমাদের সে তাওফীক ও শক্তি দান করুন। আমীন ॥

Wednesday, July 20, 2011

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেনআনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততাআল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (يونس: 58)

বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোকতারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তমসূরা ইউনুস : ৫৮
পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনাযখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন :

أتاكم رمضان شهر مبارك

তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছেএরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন :

فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم. رواه النسائي

আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেনএ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলোঅভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠযে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলবর্ণনায় : নাসায়ি

আমাদের কর্তব্য : আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা
এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল :

এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন
হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছেআল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ. سورة البقرة : 183

হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারসূরা বাকারা : ১৮৩

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালনএ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে :

من آمن بالله ورسولـه، وأقام الصلاة، وآتى الزكاة، وصام رمضان، كان حقاً على الله أن يدخله الجنة ... رواه البخاري

যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো...বোখারি

দুই. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন -

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة : 184

রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীসূরা বাকারা : ১৮৪

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছেসেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করেকোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছেশুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়ামতাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিতপ্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেনআর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেনসহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত

তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদেররাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين. وفي لفظ : (وسلسلت الشياطين) رواه مسلم

যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। (মুসলিম)

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে নাশয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকেতারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকেকারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে

চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদরআল্লাহ তাআলা বলেন :

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿3﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿4﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿5﴾ (القدر: 3-5)

লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তমসে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমেশান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্তসূরা আল-কদর : ৩-৫

পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাসরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد

রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদ আহমদ)

অন্য হাদিসে এসেছে -

إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، (يعني في رمضان) وإن لكل مسلم في كل يوم وليلة دعوة مستجابة. صحيح الترغيب والترهيب.

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে

ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাসযে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেনতিনি বলেছেন :

.. رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له. .رواه الترمذي

ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। (তিরমিজি)

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল

সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

إذا كان أول ليلة من رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب، وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر! ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة. رواه الترمذي

রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় নাজান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় নাপ্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন  (তিরমিজি)

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখেএমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাসএ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন নাএমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় নাআল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন :

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر: 10

ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবেসূরা যুমার : ১০

Monday, June 27, 2011

ফতোয়ার প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা

ফতোয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। উম্মাহ ও এর সদস্যদের নানামুখী সমস্যা ও বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সময়োচিত সমাধানে এটি একটি চলমান ব্যবস্থা। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতির বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতরা (আলেমরা) তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও গবেষণার মাধ্যমে জীবন চলার পথে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা প্রতিকারের মাধ্যমে জাতির স্বাভাবিক চলার পথকে করে তোলেন স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল।

ফতোয়া শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া, কোনো বিষয়ে অভিমত দেয়া, সসম্যার সমাধান দেয়া, উপদেশ দেয়া, পরামর্শ দেয়া, Formal legal opinion বা বিধিবদ্ধ আইনি অভিমত ইত্যাদি। যিনি এসব জিজ্ঞাসার জবাব দেন বা কোনো বিষয়ে আইনসঙ্গত অভিমত দেন বা দেয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাকে মুফতি বলা হয়। মুফতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রসিদ্ধ আরবি অভিধান আল মুনজিদে বলা হয়েছে­ ‘মুফতি হলেন সেই ফকিহ বা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, যিনি ফতোয়া দিয়ে থাকেন এবং শরিয়ত সংশ্লিষ্ট যেসব মাসয়ালা­মাসায়েল তার ওপর আরোপিত হয়, তার জবাব দেন।’ john Milton Cowan মুফতি অর্থ করেছেন Deliverer of formal legel opinions, official expounder of Islamic law  ‘বিধিবদ্ধ আইনি অভিমত প্রদানকারী,’ ইসলামী আইনের অফিসিয়াল বা দায়িত্বশীল ব্যাখ্যা দানকারী।

ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তাঃ ফতোয়া ইসলামী বিধানের অপরিহার্য অঙ্গ। ইসলাম থেকে ফতোয়াকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। মুসলমানদের ব্যক্তি, সমাজ ও সামাজিক জীবনের সর্বত্রই ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ ইসলাম এমন এক জীবনবিধান, যেখানে জীবন যাপন করতে হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী। এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিধান কী তা জানা আবশ্যক। প্রতিটি বিষয়ে বিধান জ্ঞান যেহেতু সবার থাকে না, সেহেতু তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে তা আমল করতে হয় বা বাস্তবায়ন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো বিষয়ে তোমরা অবগত না থাকো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।’ (আন নাহলঃ ৪৩)।

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ‘আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ কুরআন নাজিলের সময় কোনো বিষয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হলে ক্ষেত্রবিশেষে আল্লাহ নিজেই ফতোয়া দিয়েছেন। কুরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘লোকেরা আপনার কাছে ফতোয়া চায়, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদের কালালা (পিতা-মাতাহীন ও নিঃসন্তান উত্তরাধিকার) সম্পর্কে ফতোয়া দিচ্ছেন।’ (নিসাঃ ১৭৬)।

‘লোকেরা আপনাকে নারীদের ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞেস করে, আপনি বলে দিন, আল্লাহই তাদের ব্যাপারে ফতোয়া দিচ্ছেন।’ (নিসাঃ ১২৭)।

ফতোয়াদান একটি চলমান প্রক্রিয়া। মানবসমাজ যত দিন থাকবে এর প্রয়োজনীয়তাও তত দিন থাকবে। কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে বা কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিলে তার সমাধান ও সংশয় নিরসনের জন্য অন্যকে জিজ্ঞেস করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি আদালতও কোনো বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার জন্য ‘এমিকাস কিউরি’ নিয়োগ করে তাদের কাছ থেকে ফতোয়া নিয়ে থাকেন।

সুতরাং ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আল্লাহর রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন এক কথায় ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শামিল এবং মানব প্রকৃতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ারও শামিল।

ফতোয়ার হুকুমঃ ফতোয়া ফরজে কিফায়া। একদল বিশেষজ্ঞ আলেমকে এ কাজে নিয়োজিত থাকা বা রাখা জরুরি। কারণ মুসলমানদের সামনে প্রতিনিয়ত দ্বীনি বিধিবিধানের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যার অবতারণা হয়ে থাকে, যার জবাব দেয়ার জন্য ফতোয়া দানে পারদর্শী একদল আলিমের নিয়োজিত থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন আল্লাহ আহলে কিতাবদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, তোমরা তা (আল্লাহর বাণী) মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং কখনোই তা গোপন করবে না। (আলে ইমরানঃ ১৮৭)।

রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তিকে কোনো জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তারপর সে যদি তা গোপন করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের একটি লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে।’ (তিরমিজি)।

যে ব্যক্তি অজ্ঞ, কোনো বিষয়ের হুকুম সম্পর্কে অবগত নয়, তার ওপর ওয়াজিব হলো জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া। কারণ শরিয়তের হুকুম পালন করা তার জন্য আবশ্যক।

যারা কুরআন ও হাদিস থেকে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে পারদর্শী, সমস্যা সমাধানে দক্ষ, ইজতিহাদ তথা চিন্তা-গবেষণা করে মাসয়ালা-মাসায়েল চয়নে সক্ষম তাদের ফতোয়াদানের কাজে নিয়োজিত করতে হবে। প্রতিটি রাষ্ট্রেই একদল মুফতি নিয়োগ করা আবশ্যক, যারা জনগণকে বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান দেবেন এবং যাদের কাছে জনগণ প্রশ্নাদি তুলে ধরবেন। এ ক্ষেত্রে শাফেয়ি মাজহাবের ইমামরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে মুফতি নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন।

এ আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, ফতোয়াকে অস্বীকার করা বা নিষিদ্ধ করা ফরজকে অস্বীকার বা নিষিদ্ধ করার শামিল। আর যারা ফরজকে অস্বীকার বা অমান্য করে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের হুকুম কী, তা সবারই জানা। নিষিদ্ধ করা তো দূরের কথা, কোনো মুসলমান ফতোয়াকে অস্বীকার বা অমান্যও করতে পারে না। সুতরাং জনগণ যাতে সহজেই ফতোয়া পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রতি জেলা-উপজেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুফতি নিয়োগ করা জরুরি। আর এ কাজটি মুসলিম দেশের সরকারের দায়িত্ব বিধায় সরকারকে এর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ ও যোগ্য মুফতি নিয়োগের পর অযোগ্য ও অদক্ষ লোকেরা যাতে ফতোয়া না দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে ভুল ফতোয়া এবং ফতোয়ার অপপ্রয়োগ থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে। তা না করে সাধারণভাবে ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করা হলে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে রোগী নিরাপদ নয়, এমনকি তার কাছে রোগীর মৃতুøর আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু এ জন্য চিকিৎসাকে নিষিদ্ধ করা যুক্তিযুক্ত নয়, বরং এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ ডাক্তারের ব্যবস্থা করা। দক্ষ ডাক্তারের ব্যবস্থা না করে চিকিৎসাকে নিষিদ্ধ করা বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিষিদ্ধ করা হলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ একজন গুরুতর অসুস্থ রোগী যখন ভালো ডাক্তার না পায় তখন বিপদের সময় সে হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেই বাধ্য হবে। ঠিক তেমনি যোগ্য মুফতির ব্যবস্থা না করে ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করলে বা অযোগ্য লোকের কাছ থেকে ফতোয়া নেয়াকে নিষিদ্ধ করলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ গুরুতর প্রয়োজনের সময় ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার সমস্যা সমাধানের জন্য কারো না কারো কাছে যাবেই। সুতরাং ফতোয়াকে নিষিদ্ধ না করে বিধিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালত এবং সরকারের কাছে আমাদের আবেদন নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজী নিয়োগের অনুরূপ ইসলামী জনতার নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যাবলির সঠিক সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ মুফতি নিয়োগ করা হোক।

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ফতোয়া এবং বিচারকাজ এক জিনিস নয়। ফতোয়া হলো আইনের ব্যাখ্যা করা বা আইনি মতামত ও পরামর্শ দেয়া, যা বর্তমানে অ্যাডভোকেট বা আইনজীবীরা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের হুকুম জানতে চাইলে মুফতির দায়িত্ব হলো তা জানিয়ে দেয়া। তার আলোকে দণ্ড দেয়া বা বিচার করা হলো আদালতের কাজ।

অনেকেই ফতোয়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন এবং ‘ফতোয়াবাজ’ প্রভৃতি শব্দ প্রয়োগ করে মুফতি ও আলেমদের তুচ্ছজ্ঞান ও উপহাস করে থাকেন। তাদের জানা উচিত, ফতোয়া, মুফতি প্রভৃতি ইসলামের পবিত্র ভাবধারাসমৃদ্ধ পরিভাষা। ফতোয়া দান কোনো তুচ্ছ কাজ নয়, বরং এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এ কারণে মুফতিও অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। কারণ এ কাজ স্বয়ং আল্লাহ করেছেন (আগে এসংক্রান্ত কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে) এবং তাঁর রাসূলকে এ কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। আল কুরআনে বলা হয়েছে, আমি আপনার প্রতি স্মারক (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন, যা তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে, আর যাতে তারা চিন্তাভাবনা করতে পারে।’ (আলে ইমরানঃ ১৭৬)। মূলত ফতোয়ার মাধ্যমে মুফতিরা মহান আল্লাহর বিধানকেই মানুষের কাছে বর্ণনা করেন। ইমাম আল কারাফি রহঃ মুফতিকে আল্লাহর মুখপাত্রের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লামা ইবনুল কায়িম মুফতিকে মন্ত্রীর মর্যাদায় স্থান দিয়ে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন বলে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যদি রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করা সম্মান ও মর্যাদার বিষয় হয়, তাহলে মহান আল্লাহর পক্ষে স্বাক্ষর করা কতই না সম্মান ও মর্যাদার।’ সুতরাং এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা উপহাস করা সম্পূর্ণ ঈমানপরিপন্থী কাজ।

বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

‘হে মুসলিম ভাইয়েরা, তোমরা সত্যিকারের মুসলমান হও।’

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিলস্নীর দক্ষিণাঞ্চলের এলাকা হরিয়ানা মেওয়াত অধিবাসী ধর্মকর্মহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আজকের তাবলীগ জামায়াতের সার্থক রূপকার হযরত মাওলানা ইলিয়াছ কান্ধলভী (রহ.)। তিনি বলেছেন-দাওয়াত ও তাবলীগের হাকিকত বা উদ্দেশ্য হল ‘ঈমানের দাওয়াত। এ দাওয়াত নিজের সংশোধন তথা সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দাওয়াত। ঈমানের এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর দেয়া জীবন, সম্পদ এবং সময় আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এর সঠিক ব্যবহার শিক্ষা করা এবং বাস্তব জীবনে এর সঠিক প্রয়োগ করার পাশাপাশি আল্লাহ ভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করে দেয়ার মেহনত করা। মানবজীবনে আজ এই দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

সে জন্য আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতে গোনা ক’জন মানুষ নিয়ে তিনি তাবলীগের দাওয়াতে মেহনত শুরু করেন। তাবলীগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হজরত ইলিয়াছ (র.) ১৩৫১ হিজরি সালে হজ্ব থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি হুজুর আকরামকে (স.) স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী (স.) তাকে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবীর (স.) নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সূচনা করেন। তারপর এ কাজকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য এ উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুজর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিলস্নীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।  এরপরই ক্রমেই তাবলীগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গন্ডি ছাড়িয়ে পেঁৗছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.) এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সলে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ইজতেমা সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলীগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, তাবলীগ জামায়াতের সদর দফতর দিল্লীতে থাকা সত্বেও এর বার্ষিক সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। কথিত আছে, তাবলীগ জামায়াতের মুরুবি্বদের বৈঠকে ইজতেমার স্থান নির্ধারণের জন্য নাকি লটারি হয়েছিল। সেই লটারিতে বাংলাদেশের নাম ওঠে। আর সেই থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ এ বিশ্ব ইজতেমা। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং হালে পাকিস্তানের রায় বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়। বিশ্ব ইজতেমা সফল হোক সেই কামনা করছি।

Sunday, June 26, 2011

একমাত্র ইসলামেই রয়েছে নারীদের প্রকৃত সম্মান

শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক

মাতৃজাতি সমাজের অর্ধাংশ এবং অর্ধাঙ্গিনী। তাদের প্রতি ঘৃণা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও উপক্ষো এবং অন্যায়-অত্যাচার সমাজকে পুঙ্গ করে রাখবে। অন্ধকার যুগে তো সমাজ নারীদের প্রতি এতই হিংস্র, নির্দয়-নিষ্ঠুর ও নির্মম ছিল যে, মেয়ে সন্তানকে ভালবাসত না কেউই, অনেকে তাকে জীবিত কবর দিয়ে দিত। বর্তমান যুগ যাকে নারীদের রাজত্বের যুগ বলা যেতে পারে, এই যুগেও মেয়ে সন্তান জন্মের প্রতি অনেক কম লোকেরই আনন্দ হয়। এ কি নারীদের প্রতি বৈরীভাবের লক্ষণ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মেয়েদের প্রতিপালন হতে সর্বস্তরে তাদের মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখেছেন। যার কিছু নিুরূপÑ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুইটি মাত্র মেয়েকে সুন্দররূপে ভরণ-পোষণ ও প্রতিপালন করবে সে বেহেশতে আমার এত নিকটবর্তী হবে যেরূপ হাতের আঙ্গুল সমূহ পরস্পর নিকটবর্তী। মুসলিম শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ে বা তিনজন ভগ্নির প্রতিপালন ও শিক্ষাদান সুচারুরূপে করবে, যে পর্যন্ত না তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থা হয়; তার জন্য বেহশত অবধারিত হবে। দুইজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, দুইজনের প্রতিপালনেও তাই। একজনের প্রতিপালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস কারা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তদুত্তরে তাই বলেছেন। মিশকাত শরীফ ৪২৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, যার কাছে কোনো মেয়ে থাকে এবং সে মেয়েকে তুচ্ছ না করে, ছেলেকে অগ্রগণ্য না করে আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন। আবু দাউদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, তোমার কোনো মেয়ে স্বামীর পতিত্যক্তা হয়ে নিরাশ্রয়রূপে তোমার আশ্রয়ে ফিরে আসলে তার জন্য তুমি যা ব্যয় করবে তা তোমার জন্য সর্বাধিক উত্তম দান এবং তা আল্লার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যের ব্যয় গণ্য হবে। ইবনে মাজাহ শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, নারী জাতি সৃষ্টিগতভাবেই একটু বক্র স্বভাবের; পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে তথা বিচ্ছেদের পালায় এসে যাবে। সুতরাং তাকে বাঁকা থাকতে দিয়ে তার সাথে তোমাদের জীবন নির্বাহ করতে হবে। তোমাদের প্রতি আমার বিশেষ উপদেশ-তোমরা নারীদের প্রতি উত্তম ও ভালো হয়ে থাকবে। মুসলিম শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীগণ নামাজ-রোজা, সতীত্ব রক্ষা ও স্বামীর আনুগত্য এই সংক্ষিপ্ত আমল দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে এত বড় মর্যাদা লাভ করবে যে, বেহেশতের যে কোনো শ্রেণীতে সে প্রবেশ করার অধিকার লাভ করবে। মিশকাত শরীফ ২৮১

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, পরিপূর্ণ ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যে তার সহধর্মিণীর সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। তিরমিজী শরীফ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কড়া নির্দেশ দিলেন, গৃহিনীদেরকে কেউ প্রহার করতে পারবে না। অতঃপর একদিন ওমর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট প্রকাশ করলেন, নারীগণ অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে গেছে। সেমতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম (প্রয়োজন স্থলে সংযমের সহিত) প্রহারের অনুমতি দিলেন। এরপর বহুসংখ্যক মহিলা তাদের স্বামীর প্রতি অভিযোগ নিয়ে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি অসাল্লামের ঘরে ভিড় জমাল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কঠোর ভাষায় বললেন অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের সম্পর্কে অভিযোগ করছে, ঐরূপ স্বামীগণ মোটেই ভালো মানুষ নয়। আবু দাউদ শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন, সহধর্মিনীর সাথে যে উত্তম জীবন-যাপনকারী হয় সেই উত্তম মানুষ। আমি আমার সহধর্মীণীদের সাথে উত্তম জীবনযাপন করি। তিরমিজি শরীফ

সত্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম সহধর্মীণীর প্রতি অতি উত্তম ছিলেন। একবার ছফর অবস্থায় বিবি ছফিয়্যা রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহার জন্য উটে আরোহণ কঠিন হল; (তার পক্ষে উট উচু ছিল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজ উরু পেতে দিলেন। ছফিয়্যা রা. সিঁড়ির মতো নবীজির উরু মোবারকের ওপর পা রেখে উটে চড়লেন। বুখারী শরীফ

আর একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এতেকাফে ছিলেন। ছফিয়্যা রা. রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি অসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসলেন, তার প্রত্যাবর্তনের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে মর্যাদার সাথে বিদায় দানে তার সঙ্গে মসজিদের দরজা পর্যন্ত আসলেন। বুখারী শরীফ

আয়েশা রা. কম বয়সী ছিলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের ঘরে নয় বছর বয়সে এসেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তার বাল্য বয়সের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, কিছু বান্ধবী ছিল যাদের সঙ্গে আমি বাল্যসুলভ খেলাধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ঘরে আসলে ওরা লুকিয়ে যেত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ওদেরকে তালাশ করে আমার কাছে পাঠতেন। তারা আবারও আমার সাথে খেলাধূলা করত। বুখারী শরীফ
আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, একবার ঈদের আনন্দে খঞ্জর চালনার জিহাদী খেলা মসজিদে হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আমাকে ঘরের দরোজায় তার পিছনে দাঁড় করিয়ে তার কাঁধের ফাঁক দিয়ে ঐ খেলা দেখালেন। খেলা দেখায় আমার মন ভরে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। আয়শা রা. বলেন- খেলা দেখায় লালায়িতা যুবতী কত দীর্ঘকাল দেখবে তা সহজেই অনুমেয়। বুখারী শরীফ

আয়শা রা. বর্ণনা করেছেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আমার সাথে দৌড়-প্রতিযোগিতা করলেন। তাতে আমি জয়ী হলাম। অনেক দিন পর যখন আমার শরীর ভারী হয়ে গিয়েছিল তখন আর একদিন সেই প্রতিযোগিতা করলে আমি পরাজিত হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তখন কৌতুক করে বললেন, আমার সেই পরাজয়ের বিনিময়ে তোমার এই পরাজয়। আবু দাউদ শরীফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের কী মধুর সম্পর্ক ছিল সহধর্মিণীদের সঙ্গে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের সাথে সময়ে খোশ-গল্প জুড়ে ছিলেন। হাদিসটি বুখারী শরীফেও উল্লেখ আছে- ‘হাদিসে উম্মে যারা’ নামে। এক সময় আরবের একাদশ সংখ্যক সুসাহিত্যিক মহিলা একত্র হয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ স্বামীর অবস্থা বর্ণনায় ভাষা জ্ঞানের বাহাদুরী দেখাল। তাদের মধ্যে ‘উম্মে যারা’ নামের মহিলা সুদীর্ঘ ও সুললিত ভাষায় নিজ স্বামীর সর্বাধিক বেশি প্রশংসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আয়েশা রা. কে কাছে বসিয়ে সেই একাদশ মহিলার প্রসিদ্ধ গল্পটি শুনালেন এবং বললেন, আয়েশা! উম্মে যারার স্বামী তার জন্য যেরূপ ছিল আমি তোমার জন্য সেরূপ।

নারী সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রতিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম অনুরাগী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের আমলে দীন-শিক্ষার একমাত্র কেন্দ্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামই ছিলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের ভাষণসমূহ বিশেষভাবে শরিয়তের বিশেষ বস্তু ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের ভাষণে নর-নারী নির্বিশেষে সকলের উপস্থিতির আদেশ ছিল। জুমা ও ঈদের নামাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম খোৎবা বিশেষ ভাষণরূপে দিতেন; সেই ভাষণ শোনার জন্য সকলেই উপস্থিত হতেন, তবে নারীগণ সকলের পেছনে থাকতেন। একবার ঈদের খোৎবা সাধারণ নিয়মে প্রদানের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম লক্ষ্য করলেন, নারীদের পর্যন্ত তার কথা পূর্ণ রূপে পৌঁছেনি। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম খোৎবাস্থল হতে ফিরার পথে বেলাল রা. কে সঙ্গে করে নারীদের অবস্থান স্থলে পৌঁছে তথায় নারীদের লক্ষ্যে পুনঃভাষণ দিলেন। বুখারী শরীফ

আরও একবারের ঘটনা-নারীগগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের কাছে অভিযোগ করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের মজলিসে তারা পুরুষদের ভিড়ের কারণে পূর্ণ উপকৃত হতে পারে না; সেমতে তাদের অভিলাষ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের অনুরোধ রক্ষায় ভিন্ন মজলিসের ব্যবস্থা করলেন।
নারীদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কত অধিক সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাদের কত বেশি মর্যদা দিতেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ-বিদায় হজ্জের নীতি নির্ধারণী ঐতিহাসিক ভাষণে নারীদের মর্যাদা দানের কর্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। সেই ভাষণে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-

‘নারীদের ওপর স্বামীদের যেরূপ হক্ব ও দাবি আছে তদ্রুপ স্বামীদের ওপর স্ত্রীদেরও হক্ব এবং দাবি আছে।’ তিনি আরও বলেছেন-নারীদের সম্পর্ক আমার বিশেষ নির্দেশ যে, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও সর্বপ্রকার কল্যাণকর ব্যবস্থা সর্বদা বজায় রাখা। তাদেরকে তোমরা লাভ করেছ আল্লাহর আমানতরূপে, তাদের সতীত্বকে ভোগ করছ আল্লাহর বিধানের অধীনে। সেই আল্লাহর রাসূল আমি, অতএব তাদের সম্পর্কে আমার নির্দেশ পালনে তোমরা বাধ্য।

একদা আবু বকর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের ঘরে আসছিলেন; বের হতে বিবি আয়েশা রা. উচ্চস্বর শুনতে পেলেনÑ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের সঙ্গে প্রতিউত্তর করছিলেন। আবু বকর রা. ক্রোধ ভরে ঘরে প্রবেশে আয়েশা রা.কে এই বলে শাসাতে লাগলেন, এত বড় স্পর্ধা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের আওয়াজের উর্ধ্বে তোমার আওয়াজ! আবু বকর রা. এই বলে আয়েশা রা. কে চড় মারতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে থামালেন এবং আয়েশাকে প্রীতির ভাষায় বললেন, দেখলে তো মিঞা সাহেব থেকে কত কষ্টে তোমাকে বাঁচিয়াছি? -আবু দাউদ শরীফ

সংগ্রহ
জামেয়া রহমানীয়া মাদ্রাসা

Tuesday, June 21, 2011

কার্গুজারী

চিল্লার জন্য আল্লাহ আমাকে কবুল করেন

আমার জীবনের পরিবর্তনের পিছনে বিশ্ব ইজতেমা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি। লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এই ইজমেতমায়। প্রত্যেক সাধারণ মুসলমানের মন পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে এই আয়োজন। কেননা সারা বিশ্ব থেকে অল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আগমন ঘটে । ধনী গরিব ভেদাভেদ ভুলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গে সকলই ত্যাগ স্বীকার করে এক মজমায় জমা হয়।  আল্লাহর কাছে অসংখ্য শুকরিয় জানাই যিনি আমাকে এ দাওয়াতি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।
এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ভাই মুহাম্মাদ আনেয়ার হুসাইন। বর্তমানে তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ডিগ্রি পাশ করে বেকার সময় কাটাচ্ছিলেন। পাশাপাশি চাকরি খুঁজছিলেন। কিন্তু কোন কুল কিনারা হচ্ছিল না। এমতাবস্থায় গত ২০০৮ সালে বিশ্ব ইজতেমার সময় চলে আসে। ভাই আনোয়ার জানান,তার এলাকার বন্ধু ভাই শামীম তাকে ইজতেমায় যাওয়ার জন্য আহবান করে। তখন আমি কোন চিন্তা করে এক কথাতেই রাজি হয়ে যাই।  কোন কাজ নেই তে!। এলাকা থেকে জামায়াত বন্দী হয়ে টঙ্গীর ময়দানে তিন দিনের জন্য চলে যাই। আমার জীবনের এক স্বরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে টঙ্গীর ময়দানের সেই তিন দিন। মানুষ যে একমাত্র আল্লাহর জন্যই এমন নিবেদিত প্রাণ হতে পারে তা আমি সরাসরি দেখেছি ইজতেমার ময়দানে। ইজতেমায় থাকাকালীন এবং তার পরে বেশ কিছু দিন  আমার মনে এমন এক প্রশান্তি অনুভব করেছি যা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। এমনটি আগে কখনও হয়নি।
যাই হোক, আমি নামাজে নিয়মিত হওয়ার চেষ্ট করে যাচ্ছিলাম এবং দ্বীন শেখার ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিছুদিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসি। নামাজ কালাম সব বন্ধ হয়ে যায়। চাকরির পিছনে পিছনে ছুটছি কিন্তু চাকরি হবার কোন নাম নেই। আমার আবার অস্থির সময় ফিরে আসে। মন অবসন্ন থাকে । ভালো লাগে না কিছুই। একদিন ভাই শামীমের সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা হয়, তখন তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিলেন। সব খুঁজ নিয়ে তিনি আমাকে বললেন, আনোয়ার তুমি না আমার সঙ্গে ইজতেমায় গিয়েছিলে, সেখানে মুরব্বীরা কী বলেছিল তুমি কি তা সব ভুলে গিয়েছ ? দীন শেখা এবং দীনের দাওয়াতের কাজ একনিষ্ঠভাবে ও ধারাবাহিকভাবে  না করলে এ কাজে তুমি কোন ভাল ফলাফল পাবে না। এক্ষেত্রে তোমার একান্ত ইচ্ছাই যথেষ্ট। সব কাজের ক্ষেত্রে অল্লাহর হুকুম ও রাসূল সা. তরিকা মতো করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। ইনশাআল্লাহ  আল্লাহ তোমার সকল অবস্থা পরিবর্তন করে দিবেন । আল্লাহর জন্য হয়ে যাও, আল্লাহ চায় তো সব মুশকিল আসান করে দিবেন। ভাই শামীমের এ সব কথা শোনার পর আমার নিজেকে অনেক বেশি অপরাধী মনে হতে লাগলো। আমি কালবিলম্ব না করে পরের সপ্তাহেই তিন দিনের জামাতের জন্য বের হয়ে যাই। এরপর এক চিল্লার জন্য আল্লাহ আমাকে কবুল করেন। উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রংপুরে জীবনের প্রথম চিল্লা অতিবাহিত করি। এরপর থেকে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি দাওয়াতে তাবলিগির এ মেহনতের সঙ্গে সদা জড়িত থাকার জন্য। গত বছর আল্লাহর রহমতে তিন চিল্লা যাওয়ার সুযোগ হয়। আল্লাহর অনুগ্রহে  ছোটখাট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। তা দিয়ে আল্লাহ আমাকে ভালোই রাখছেন। জীবনের এ তরু ণ বয়সে আল্লাহ যে আমাকে তার দীন মোতাবেক জীবন পরিচালনার জন্য সহিহ বুঝ দান করেছেন এ জন্য তার শুকরিয়া জানিয়ে শেষ করতে পারবো না। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে,তাই সকলের কাছে এ গুনাহগারের দোয়া দরখাস্ত। আল্লাহ আমাদের এ কাজের আঞ্জাম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

বিবেক মানবদেহের সঞ্চালক

বিবেক মানবদেহের সঞ্চালক
 আল্লামা আজিজুল হক
হযরত নোমান ইবনে বশির রা. বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি যে ইসলামে  হালাল-হারাম স্পষ্ট।  এ দুটির মাঝে কতোগুলো সন্দেহভাজন  বিষয়বস্তুও আছে। সেগুলো কোন পর্যায়ে তা অধিকাংশ লোকই নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করতে পারে না। যে ব্যক্তি সে সন্দেহজনক বিষয়গুলো থেকে সংযমি হবে তারই দীন-ঈমান ইজ্জত-আবরু  সুরক্ষিত  থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়বস্তুসমূহে লিপ্ত হবে, তার অবস্থা হবে  কোনো রাখাল তার পশুপালকে (সরকারী বা কারো) সংরক্ষিত স্থানের নিকটবর্তী  চরিয়ে থাকে; এমতাবস্থায় অ- সময়ের মধ্যেই তার পশুগুলো সে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়বে (এবং তার দ্বারা রাখাল বিপদগ্রস্ত হবে। তেমনি মধ্যস্থলিয় সন্দেহযুক্ত বিষয়বস্তুগুলো থেকে যে ব্যক্তি সংযমি না হবে এবং তা থেকে দূরে না থাকবে, অচিরেই অনিবার্যভাবে তার নফস বা প্রবৃত্তি স্পষ্ট হারামে লিপ্ত হয়ে যাবে, ফলে সে দুনিয়া ও আখেরাতে অপদস্থ হবে) তোমরা শুনে রাখ, প্রত্যেক বাদশাহর সংরক্ষিত এলাকা থাকে তেমনি আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ বিষয়বস্তুসমূহই দুনিয়ার বুকে তার সংরিক্ষত এলাকা। (সেখানে কারো প্রবেশ করতে নেই, অধিকন্তু তার নিকটবর্তী হওয়া তথা সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হওয়াও উচিত নয়।
  আরো শুনে রাখ  মানবদেহে এমন একটি অংশ রয়েছে যে, সেই অংশটি যখন যথার্থভাবে ঠিক হয়ে যায়, তখন মানুষের পূর্ণ অস্তিত্ব ঠিক হয়ে যায়।  অর্থাৎ সম্পূর্ণ মানবদেহটিই তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হতে থাকে। পক্ষান্তরে সেই অংশটি যখন খারাপ হয়ে পড়ে, তখন সমস্ত অস্তিত্বটিই খারাপ হয়ে যায়। অর্থাৎ মানব দেহের কোনো অংশ বা কোনো অঙ্গই তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না। খুব ভালো করে জেনে নাও সে অংশটি হুে ছ মানুষের বিবেক।
বিশ্লেষণ : শরিয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকাম চার প্রকার দলিল ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় । কুরআন,  হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। এর যে কোনো একটি দ্বারা যে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে হালাল বৈধ ও গ্রহণীয় বলে প্রমাণিত হবে যে এটিই হালাল এবং যে কোনো বিষয় সুষ্পষ্টভাবে হারাম নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় বলে প্রমাণিত হবে তা হারাম।
 এ দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল এবং হারাম অতি স্পষ্ট  এবং এই সকল দলিল, প্রমাণ ও মাপকাঠি দ্বারা উভয়টিকে বেছে নেয়া অত্যন্ত সহজ। অধিকন্তু এটিও স্পষ্ট যে, হালালকে গ্রহণ করা যাবে এবং হারামকে বর্জন করতে হবে। এতে বিন্দুমাত্রও নড়চড় করার অবকাশ নেই। কিন্তু হালাল ও হারাম পর্যায়দ্বয়ের মধ্যবর্তী আরো কিছু পর্যায় রয়েছে। যথা মাকরূহ, খেলাফেআওলা বা অবাঞ্ছনীয়, ইমাম ও খাঁটি ওলামাদের মতোবিরোধমূলক বিষয়াদি।    
এতদ্ব্যতীত এমন আরো বহু বিষয়াদি আছে যা শরিয়তে লিপিবদ্ধ আছে এবং তা ছাড়াও দৈনন্দিন কার্যকলাপের  ভেতর দিয়ে প্রায়শই এমন বিষয়াদি আমাদের সম্মুখবর্তী হতে থাকে যা নির্দিষ্টভাবে হালাল বলেও নিশ্চিত হওয়া যায় না, কিংবা হারাম বলেও স্থির করা যায় না এ সকল অনিশ্চিত ও সন্দেহভাজন বিষয়গুলোকে সযত্মে পরিহার করে চলাই একান্ত বাঞ্ছনীয়। কেননা এ সমস্ত সন্দেহজনক বিষয়বস্তুসমূহ থেকে বিরত থাকলে এক দিকে জাগতিক ব্যাপারে যেমন লাভবান হওয়া যায়, কারণ সন্দেহের স্থানে পা রাখলেই স্বীয় মান-মর্যাদা কলুষিত হওয়ার এবং নানা প্রকার কুৎসা রটানোর সুযোগ উপস্থিত হয়।
অন্যদিকে তেমনি দীনের ব্যাপারেও লাভের সীমা থাকে না। কারণ যে ব্যক্তি স্বীয় নফ্স ও প্রবৃত্তিকে সন্দেহের স্থান থেকে বিরত রাখতে অভ্যস্ত হবে, সে নিশ্চয় যাবতীয় কুপ্রলোভনের বস্তু থেকে এবং যাবতীয় হারাম কাজ থেকে স্বীয় নফ্সকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
হারাম ও সন্দেহভাজন কাজ থেকে বাঁচতে হলে সর্বপ্রথম নিজের  বিবেককে যথার্থভাবে সুষ্ঠু ও ঠিক করতে হবে। কারণ মানুষের বিবেকই মানবদেহরূপী কারখানার জন্য বৈদ্যুতিক মটর স্বরূপ। মটর ঠিকভাবে চালু থাকলে কারখানার প্রতিটি শাখা তার প্রতিটি অংশ ও সমস্ত কল-কবজার চাকাগুলো রীতিমত চলতে থাকবে। আর মটরে গোলযোগ থাকলে তার সংযোগ রক্ষাকারী সমস্ত মেশিন ও তার অংশগুলোর মধ্যেও গোলযোগ দেখা দিবে। অবশ্য মটরের সঙ্গের চাকাগুলো সক্রিয়সংযোগ রক্ষার প্রতিও তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে মেশিনের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে সংযোগবিহীন শুধু মটর চালালে উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং এ ধরনের নিরর্থক ও অনিয়মিত পরিচালনার ফলে কারখানা ফেল হয়ে যাবে। অতএব মেশিনের সমস্ত কল-কবজা ও তার বিভিন্ন অংশগুলোকেও রীতিমত চালু রেখে মোটরের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, তার ভাল-মন্দের প্রভাব সমস্ত কারখানার ওপর পড়ে থাকে। তেমনিভাবে মানুষের কর্তব্য তার বিবেক-বুদ্ধিকে সুষ্ঠু করে তার পর সেই সুষ্ঠু জ্ঞান-বিবেক দ্বারা স্বীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পরিচালিত করা।

দেহ আলোচনা
উপরোক্ত হাদিসের শেষ বাক্য আলা ইন্নাফিল জাছাদে মুজগাতান মানবদেহের মধ্যে একটি বিশেষ অংশ আছে যার উন্নতি-অবনতির উপর সম্পূর্ণ দেহের উন্নতি ও অবনতি নির্ভর করে। এ তথ্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এতে মানুষের সৃষ্টি তত্ত্ব ও দেহ-তত্ত্বের ইঙ্গিত দানে মানবের প্রকৃত উন্নতির উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে যে, স্থূল দেহের উন্নতি অপেক্ষা সূক্ষè আত্মার উন্নতির ওপরই মানুষের প্রকৃত ও মুখ্য উন্নতি নির্ভর করে। আত্মার উন্নতি সাধিত না হলে মানব জীবন বিফল ও অত্যন্ত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
মানুষের অজুদ বা অস্তিত্ব দুই ভাগে বিভক্ত স্থুলদেহ যা বাহ্য দষ্টিতে বা যান্ত্রিক সাহায্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে থাকে এবং সূক্ষèআত্মা যা ঐরূপে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হতে পারে না। মানুষের স্থুলদেহ সৃষ্টির মূলে যেমন বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যথা পানি, মাটি, বায়ু ও অগ্নি তেমনি তার এ ভৌতিক দেহাভ্যন্তরে পাঁচ প্রকারের আত্মাও রয়েছে। যথা
১। পশুর আত্মা, যা দ্বারা খাওয়া শোয়া, কামরিপু চরিতার্থ করা ইত্যাদি প্রবৃত্তির উদ্রেক হয়।
২। হিংস্র জীবের  আত্মা : যা দ্বারা দ্বেষ, হিংসা, ক্রোধ ও রাগের বশীভূত হয়ে মারামারি কাটাকাটি করত: প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবৃত্তি জন্মে থাকে।
৩। শয়তানের আত্মা : যার প্ররোচনায় পাপাচার, অহঙ্কার, মিথ্যা ও সূক্ষ্ম কূট-কৌশলের দ্বারা মানুষকে ধোকা দেয়া ইত্যাদির প্রবৃত্তি উদিত হয়।
৪। ফেরেশতা আত্মা : যা দ্বারা সদাচার, ন্যায়পরায়ণতা, সততা, সত্যতা, পরোপকারিতা ও আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করা ইত্যাদির আগ্রহ ও আকর্ষণ জন্মে থাকে।
৫। মানুষের আত্মা : যার কর্তব্য হুে ছ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আত্মাকে বশ করত: তাদেরকে কুপ্রবৃত্তির দিক থেকে ফিরিয়ে দিয়ে ফেরেশতা আত্মার সদগুণাবলীতে গুণান্বিত ও পরিচালিত করা এবং আল্লাহর   মারেফত ও মহব্বত হাসিল করত: দুনিয়াতে আল্লাহর খেলাফত তথা আল্লাহর হুকুম আহকাম জারির পরিবেশ কায়েম করার আগ্রহ ও আকর্ষণ   সৃষ্টি করা।
প্রথম তিনটি আত্মাকেই তাসাওফের পরিভাষায় নফসে আম্মারা বলা হয় এবং চতুর্থ ও পঞ্চম এ দুটিকে রূহ, ক্বল বা লতিফা বলা হয় এবং এটিই হুে ছ বিবেক, বুদ্ধি ও মানবাত্মা।
দেখা গেল যে, এই  পাঁচ প্রকারের আত্মাই তাসাওফের পরিভাষায় দুই নামে পরিচিত হয়েছে। একটি হল নফসে আম্মারা; এর তিনটি বিভাগ যথা  পশুরআত্মা, হিংস্রজন্তুরআত্মা ও শয়তানেরআত্মা। দ্বিতীয়টি হলো রু হ অর্থাৎ মানবাত্মা বা বিবেক -আকল। এর দুটি বিভাগ যথা ফেরেশতার আত্মা ও মনুষত্বেরআত্মা।
রাসূল সা. আলা ইন্না ফিল জাছাদে মোজগাতান বলে মানব দেহের যে বিশিষ্ট অংশটির প্রতি নির্দেশ করেছেন, সে অংশটিই হুে ছ রু হ বা আকল-বিবেক। এর উন্নতিতে পূর্ণ মানবদেহের উন্নতি এবং এর অবনতিতে সম্পূর্ণ মানবদেহের অবনতি ঘটে থাকে; এটাই রাসূল সা. বলেছেন রু হ বা জ্ঞান-বিবেক রত্মটির উন্নতি হলে সমগ্র মানবদেহের উন্নতি হবে এবং এর অবনতিতে সমগ্র মানবদেহের অবনতি ঘটবে।
এখন দেখতে হবে যে, এই অংশটির উন্নতির অর্থ কী? বস্তুত প্রতিটি জিনিসের উন্নতি বা অবনতির বিচার করা হয় তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের  দ্বারা। তাই এখন দেখতে হবে যে রু হ বা বিবেকের উপর কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর অতি সহজ। কারণ, রু হ মানবাত্মা বা বিবেক বলে যে দুটি আত্মার নামকরণ হয়েছিল অর্থাৎ ফেরেশতাআত্মা ও মনুষ্যত্বের আত্মা তাদের কর্তব্য ছিল সদাচার, সততা, সভ্যতা ও আল্লাহর বশবর্তীতা ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট করা এবং সঙ্গে সঙ্গে নফস নামে যে অপর তিনটি শক্তি বা আত্মা আছে তাদেরকে বশে এনে ফেরেশতা আত্মার সদগুণাবলীতে পরিচালিত করা। অতএব রু হ বা বিবেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও তাই হবে। এ মহান কর্তব্য পালনে রু হ  মানবাত্মা বা বিবেক যতোটুকু উন্নতি করতে পারবে, পূর্ণমানবদেহটি ততটুকুই উন্নতি লাভ করবে। এমনকি অবশেষে এই রু হ মানবাত্মা যে উর্দ্ধজগত থেকে এসেছিল পুনরায় সে মানবদেহকে নিয়ে সেই উর্দ্ধজগতে অর্থাৎ বেহেশতে গিয়ে পৌঁছবে। পক্ষান্তরে রূহ মানবাত্মা নিজের ঐ কর্তব্যে ত্রু টি করত: নিজেই যদি নফস তথা ঐ তিন প্রকার আত্মার বশ্যতা স্বীকার করার অবনতিতে পতিত হয়, তা হলে পূর্ণ মানবদেহই অবনতির তিমির গর্তে পতিত হবে। অবশেষে ঐ রু হ মানবাত্মা মানবদেহকে নিয়ে সর্ব নিু জগতে তথা জাহান্নামে পৌঁছাবে।
আধ্যাত্মিক জ্ঞানবিশারদগণ রু হ বা বিবেকের উন্নতির পাঁচটি স্তর বর্ণনা করেছেন এবং প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করেছেন। পূর্বেই ইঙ্গিত করা হয়ে ছিল যে, রু হ মানবাত্মা বা আকল ও বিবেককে তাসাওফের পরিভাষায় লতিফা নামেও নামকরণ হয়ে থাকে। সেই অনুসারেই রু হের উন্নতির পাঁচটি স্তরের নিুলিখিতরূপে নামকরণ করা হয়েছে।
১। লতিফায়েকলব : মানুষ যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহর নাম উু চরণ করত: জিকির করে তখন সে এ লতিফায়ে কালবের কর্তব্য পালন করে।
২। লতিফায়ে রু হ : মানুষ যখন আল্লাহর মহৎ গুণাবলীর ধ্যান করে এবং এই ধ্যানের দ্বারা নিজের মধ্যেও ঐ গুণের প্রতিবিম্ব হাসিল করে, যেমন : আল্লাহ দয়ালু, দয়াময় এর ধ্যান করত: এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে, আমাকেও দয়ালু হতে হবে এবং দয়ালুর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে তখন হয় লতিফায়ে রু হের কর্তব্য পালন।
৩। লতিফায়ে সের্র : মানুষ যখন  আল্লাহর গুণাবলীর প্রতিবিম্ব নিজের মধ্যে হাসিল করায় সচেষ্ট হয় তখন তার সিনার অভ্যন্তরে আল্লাহর মারেফাতের বা আল্লাহর গুণাবলীর তত্বজ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষ আল্লাহর গুণে মুগ্ধ ও অভিভূতহয়ে আল্লাহর আশেক ও প্রেমিকে পরিণত হয়ে যায় এবং নিজের নফসের সব কুপ্রবৃত্তির প্রতি ঘৃণা জন্মে যায় এবং সেগুলোকে ফানা ও বিলুপ্ত করে দেয় অর্থাৎ সেগুলোকে পূর্ণরূপে দখল ও অধিকার করার শক্তি ও সামর্থ অর্জন করে, এটাই হুে ছ লতিফায়ে সের্র এর কর্তব্য।
৪।  লতিফায়ে খফী মানুষের মধ্যে যখন আল্লাহর মা'রেফতের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষ আল্লাহর গুণে মুগ্ধ ও অভিভুত হয়ে আল্লাহর আশেক ও প্রেমিকে পরিণিত হয়ে যায় এবং নিজের নফসের সব কুপ্রবৃত্তির প্রতি ঘৃণা জন্মে যায় এবং সেগুলোকে ফানা ও বিলুপ্ত করে দেয়। অর্থাৎ সেগুলোকে পূর্ণভাবে দখল ও অধিকার করার শক্তি ও সামর্থ অর্জন করে। এটাই হ্ছে লতিফায়ে খফীর কর্তব্য।
৫। লতিফায়ে আখফা : মানুষ ফানা-ফিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহরগুণে গুণান্বিত হওয়ার মর্তবায় পৌঁছে, যাকে আল্লাহর খেলাফত লাভ বলে; এটাই হুে ছ লতিফায়েআখফার  মর্যাদা। এ অবস্থাতেই রু হ বা বিবেক ও আকলের পূর্ণশুদ্ধি হয়ে যায়। এই অবস্থার পরে আর বিবেককে কুপ্রবৃত্তির বশীভুত হতে হয় না। রাসূল সা. মানুষকে বিবেক সঠিক করার যে প্রেরণা দান করেছেন তার উদ্দেশ্য হুে ছ মানবাত্মার পরম উন্নতিলাভ।

শেখ সাদীর গুলিস্তা

এক সাধু দরবেশ, ইবাদতে বন্দেগিতে ছিলো বেশ। কিন্তু একবার ...

এক সাধু দরবেশ, ইবাদতে বন্দেগিতে ছিলো বেশ। কিন্তু একবার একদল দুর্বৃত্ত, তাকে কষ্ট দিতে হলো প্রবৃত্ত। বলল তাকে জানে যত অকথ্য কথা, পারলে যেন চিবিয়ে খায় তার মাথা। বেচারা দরবেশ অবশেষে হয়ে অতিষ্ঠ, পীরের খেদমতে আরয করলো মনের কষ্ট। বললো, জনাব, এই হলো আমার দুরবস্থা, দুষ্টদের হাতে নাজেহাল হেনেস্থা। সব শুনে বললেন পীরে কামেল, তুমি তো বিলকুল মূর্খ জাহেল! জানো না, দরবেশি লেবাস যে করে ধারণ, হাসিমুখে সব তাকে করতে হয় বরণ! এই লেবাসে সইতে পারে না যে যিন্দেগির বুরা-ভালা, মিথ্যা দাবীদার সে, সাজে না তার গলায় দরবেশির মালা।কবিতা- ঢিল ছুঁড়িলে দরিয়ার পানি হয় না ঘোলা/ কষ্টে বেসবূর, সে যে এক ক্ষুদ্র নালা/ তোমার বুকে যে দুর্জন আঘাত হানে/ ক্ষমা করো তারে ওগো সাধু নিজের গুণে/ মাটির সঙ্গে একদিন হবে ভাই মাটি/ তাই মাটি হও আসিবার আগে কবর-ঘাঁটি।
শিক্ষা- যারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায় তাদের কর্তব্য হলো মূর্খ লোকের মূর্খ আচরণের উত্তরে ক্ষমাসুন্দর আচরণ করা।
***শোনো বাগদাদের রাজ দরবারের খবর, শাহী ঝাণ্ডা ও শাহী পর্দা করে বিতণ্ডা জবর। অনুযোগের স্বরে পর্দাকে বলে ঝাণ্ডা, আমার কথার জবাব দাও মাথা রেখে ঠাণ্ডা। আমি-তুমি করি একই বাদশাহর গোলামি, অথচ দেখো, কিসমতের এ কী যালিমি! যুদ্ধের মাঠে আমার একদণ্ড নাই অবসর, যখন তখন অভিযান, হই ধুলিধূসর। অথচ তুমি! না দেখেছো যুদ্ধের বিভীষিকা, না মরুভূমির পিপাসা ও মরীচিকা। দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা আমি সয়ে যাই অম্লান, অথচ তোমার ভাগে জোটে সব মান-সম্মান। তুমি চাঁদ-বদন, গুলবদন দাস-দাসীর আবরণ, আমি থাকি পড়ে রুক্ষ সিপাহির হাতে, করি লড়াই জীবন-মরণ। বলো কী এর কারণ, সত্য সত্য দিও বিবরণ। বলে পর্দা লাজ-শরমে, যেন মরে যায় মরমে, বিনয়ে আমি ঝুলে থাকি নিম্নমুখী, গর্বে তুমি থাকো সদা ঊর্ধ্বমুখী। অযথা উঁচিয়ে রাখে যে তার মাথা, হবেই হবে একসময় ঘাড়ে তার ব্যথা।
শিক্ষা- যে বিনয় অবলম্বন করে সে অল্প পরিশ্রমেই মর্যাদার উচ্চ শিখরে আসীন হয়, আর অহংকারী যত দৌড়ঝাঁপ করুক, লাঞ্ছনাই হবে তার ভাগ্যলিপি। সুতরাং সর্ববিষয়ে বিনয় অবলম্বন করো এবং অহংকার পরিহার করে চলো।
***অন্তর্জ্ঞানী এক বুযুর্গান, একদিন দেখেন এক পাহলোয়ান, ক্রোধে দিশেহারা, আত্মহারা, যাকে পায় তাকে করে তাড়া। বুযুর্গান করেন জিজ্ঞাসা, কেন এহেন দশা, কী তার সমস্যা? লোকেরা বলে, কেউ দিয়েছে গালি, তাই মাথায় চেপেছে খুন, রেগে মেগে হয়ে আছে আগুন। তিনি অবাক হলেন এবং বললেন, হায়, উঠাতে পারে লোহার দশমন ভার, পারে না সইতে একটু ভার দু'টো কথার! কবিতা-
পাহলোয়ানির বড়াই তুমি করো না/ ভাই কুশ্‌তি-লড়াই তোমার সাজে না/ কে বলে তারে বীর নফস যার কামীনা!/ মর্দ নয় সে চুড়িপরা ভীরু যানানা/ মানুষের মুখে পারো যদি তুলে দাও মিষ্টি/ বাহাদুরি নয় শুধু আঘাত করা তুলে মুষ্টি/ ফুলিয়ে ছাতি কাবু করো হাতি/ নিজেরে ভাবো তুমি ভদ্র মানুষ অতি/ যুগ যুগের সত্য বচন যেনো সুনিশ্চয়/ মনুষত্ব নেই, তবে মানুষ সে নয়/ আদমের বেটা মাটির গড়া, নয় আগুন/ মানুষ বলি তারে কী করে, যদি না পায় মাটির গুণ।
শিক্ষা- জনৈক বুযুর্গকে জিজ্ঞাসা করলাম খাঁটি বন্ধুর পরিচয়, তিনি বললেন, বন্ধুকে ভুলে আত্মস্বার্থে মগ্ন যে, সে নীচ অতিশয়। জ্ঞানিগণ বলে গেছেন এই বচন, নিজেকে নিয়ে সদা মগ্ন যেজন, সে তোমার না বন্ধু, না স্বজন। কবিতা- ‘সফরে তোমায় ফেলে আগে আগে চলে/ সে নয় সঙ্গী তোমার তারে যাও ভুলে/ দিলে যার নাই ধার্মিকতা ও খোদা-ভীরুতা/ আত্মীয় বলে তার সনে করো না অন্তরঙ্গতা।
মনে পড়ে, জ্ঞানের দাবীদার এক জ্ঞানী, খণ্ডন করেছে আমার এই কবিতার বাণী। সে বলে, ‘কোরআনে তো রয়েছে খোদার ফরমান, আত্মীয়তা যেন ছিন্ন না করি, যদিও করতে হয় জান কোরবান। অথচ তোমার কথা হে কবী, হে গুণী, খোদার কালাম কোরআনের নাফরমানি।’ তাকে বললাম, জ্ঞান তোমার অগাধ, মানি, তবে তুমি কি আয়াত পড়োনি, যদি বাধ্য করে তোমাকে তারা আমার সঙ্গে শরীক করতে এমন কিছুকে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তাদের কথা তুমি মান্য করো না।
কবিতা- খোদার বেগানা তোমার আত্মীয়, শত শত/ অনাত্মীয় এক খোদাভীরু শ্রেয় যেনো নিশ্চিত ।
শিক্ষা- আমাদের কর্তব্য হলো রক্তের বন্ধনের চেয়ে দ্বীনের বন্ধনকে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
***বাগদাদের এক ধনী বৃদ্ধ ধনে জনে ছিলেন সমৃদ্ধ। হঠাৎ কী যে হলো তার দুর্মতি, রূপসী কন্যার কপালে ডেকে আনেন দুর্গতি। এক ইতর চামারের সঙ্গে দিলেন তার বিবাহ। চামারের অত্যাচারে কন্যার জীবন হলো দুর্বিষহ। শেষে একদিন বললেন কন্যার পিতা, শোনো হে ইতর জামাতা, তোমার একি পাশবিকতা, কন্যার দশা করে ছেড়েছো যা তা! হাজার দিনার নাও হে চামার, ছেড়ে দাও মাসুম কন্যা আমার।
এঘটনা বলার উদ্দেশ্য আমার নয় শুধু পরিহাস ও বিনোদন। হাস্যরস ভুলে এর উপদেশটুকু করো গ্রহণ। স্বভাব যদি হয় মন্দ কখনো তা দূর হয় না, মৃত্যুর আগে খাছলত কখনো বদল হয় না। জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে বিসর্জন, ইতরের সঙ্গ যদি করো গ্রহণ। তবে নিজেকেই শুধু করো তিরস্কার, অন্যকে কিছু বলার নেই তোমার অধিকার।
শিক্ষা- এঘটনার উপদেশ পরিষ্কার। স্বভাব যাদের মন্দ তাদের সঙ্গ পরিত্যাজ্য, অন্যথায় নিজেকেই তার খেসারত দিতে হয়।