get-fans-468x60
Showing posts with label শাহ আব্দুল হান্নান. Show all posts
Showing posts with label শাহ আব্দুল হান্নান. Show all posts

Tuesday, May 24, 2011

ইসলামে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

ইসলামে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন
লিখেছেন শাহ আব্দুল হান্নান   

সমাজে নারীর অবস্থান এবং অধিকার নিয়ে আমরা নানা কথা শুনে থাকি৷ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলো বলা হয় , তার মধ্যে অনেকগুলোই গ্রহণযোগ্য৷ আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে৷ নারী-পুরুষ সকলেরই অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া অনস্বীকার্য৷ কারণ সমাজ দিনে দিনে সামনে এগুচ্ছে৷ তাই শুধু নারী বা পুরুষের নয়, বরং সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে৷গত পঞ্চাশ বছরে সমাজ অনেকটা এগিয়েছে৷ এ সময়ে পুরুষের সাথে নারীরাও সমান-সমান না হলেও, এগিয়ে এসেছে৷ বেগম রোকেয়ার সময়ে যে সমাজ ছিল , সে সমাজকে আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি৷ তিনি দেখেছিলেন যে, সে সময়ে মেয়েরা লেখাপড়ার কোন সুযোগই পেতনা৷ সে সময়ে বেগম রোকেয়া জন্ম না নিলে এবং নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাহসী উদ্যোগ না নিলে আজ আপনারা, নারীরা কেউই কিন্তু পড়ালেখা শিখতে পারতেন না৷ অবশ্য আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তখন অন্য কোন নারীকে পৃথিবীতে পাঠাতেন যিনি এই কাজটি করতেন৷ যা হোক, আমি সেদিকে গেলাম না৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার আলোচনা শেষ করতে চাই৷
সারা পৃথিবীতে, বিশেষ করে আমাদের দেশে মানুষের উপর, বিশেষ করে নারীর উপর যে অত্যাচার চলছে তার একটা ফাউন্ডেশন আছে , ভিত্তি আছে৷ অত্যাচারটা আকাশ থেকে আসছে না৷ নারীর উপরে পুরুষের , কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর যে অত্যাচার তার 'আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন' টা হলোঃ সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে- বিশেষ করে পুরুষরা বিশ্বাস করে যে- নারী পুরুষের চেয়ে ছোট , তাদের কোয়ালিটি খারাপ এবং তারা নিচু৷ এই বিশ্বাস অবশ্য নারীর মধ্যেও কিছুটা বিদ্যমান৷ মানুষের মধ্যে কতগুলো বিভ্রান্তি থেকে এ বিশ্বাসের জন্ম৷ আর এই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে নারীর উপর অবহেলা, বঞ্চনা এবং নির্যাতন৷
এখন আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয়, তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না৷ আমি এটা খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই যে , ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের মত দেশে (যে দেশে মূলত নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম) চলা যাবে না৷ যারা ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করেছে তারা কিন্তু টিকতে পারেনি , পারছে না৷ এক মহিলা বিদ্রোহ করেছিলেন-আমি নাম বলবো না- তার পরিণতি ভাল হয়নি৷ খারাপ হয়েছে৷ বিনীতভাবে বলতে চাই যে , ইসলামের 'ফ্রেমওয়ার্ক'- এর মধ্যে আমরা যদি এগুতে পারি, তবে তা সব চাইতে ভাল হবে৷ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে এরকম একটি 'ফ্রেমওয়ার্ক' আছে, যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে৷
আমি ইসলামকে বিকৃত করতে চাইনা, বিকৃত করার পক্ষেও নই এবং ইসলামের কোনো টেম্পোরারী ব্যাখ্যা দেয়ার পক্ষে নই৷ সত্যিকার অর্থেই ইসলাম নারীকে ক্ষমতায়িত করেছে এবং নারীকে সম্মানিত করেছে৷ নারীকে অধিকার দিয়েছে৷ সেগুলো ব্যাখ্যা করার আগে আমি আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন-এর নতুন ভিত্তি যেটা হতে পারে সেটা বলতে চাই৷
কি সেই ভিত্তি? যে ভিত্তির ওপর নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য বিদ্যমান? আল্লাহ মানুষের চেহারা এক রকম করেন নাই৷ সকল দিক থেকে রহ in every dot যে কোনো দু'টি মানুষ সমান নয়৷ ওজন, উচ্চতা, রঙ, শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছুতে একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষ আলাদা৷ কিন্তু মৌলিকভাবে প্রতিটি মানুষ সমান৷ আল্লাহ্র কাছে সমান৷ তার চারটি প্রমাণ আমি আপনাদের দিচ্ছি৷
১. আল্লাহ তায়ালা এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল মানুষ হচ্ছে ' রূহ' ৷ যাকে আমরা ' আত্মা' বলি৷ মূল মানুষ কিন্তু শরীর না৷ দেহ তো কবরে পঁচে যাবে৷ আমরা যারা ইসলাম বিশ্বাস করি তারা জানি , মূল মানুষ হচ্ছে ' রূহ' ৷ আল্লাহ সকল মানুষকে, তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন, একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন৷ আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সকলে একই দিয়েছিল৷ আমি সূরা আরাফের একটি আয়াত বলিঃ ( বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) ' ওয়া ইজা আখাজা রাব্বুকা' ( যখন আল্লাহ তায়ালা বের করলেন), ' মিম বানি আদামা' ( আদমের সন্তানদের থেকে), ' মিন জুহুরিহিম' ( তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে-এটা একটা রূপক কথা) ' জুররিয়াতাহুম' ( তাদের সন্তানদেরকে৷ অর্থাত্‍ সকল আত্মাকে) এবং সাক্ষ্য নিলেন তাদের ওপরে , 'আমি কি তোমাদের প্রভু নই?' তারা সকলে বললো- সকল পুরুষ এবং নারী বললো, ' বালা' ( হ্যাঁ), ' সাহেদনা' ( আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আমাদের প্রভু)৷ ( আয়াত নং-১৭২, সূরা আরাফ) তার মানে আল্লাহ্র সঙ্গে একটি পয়েন্টে সকল নারী এবং পুরুষের একটি চুক্তি হলো যে, আপনি আমাদের প্রভু; আমরা আপনাকে মেনে চলবো৷ এক্ষেত্রে পুরুষের চুক্তি আলাদা হয়নি৷ নারীর চুক্তি আলাদা হয়নি৷ সুতরাং আমরা দেখলাম , আমাদের Ideological foundation এর প্রথম কথা হচ্ছে এই যে, মূল মানুষ হচ্ছে ' রূহ' এবং তা সমান৷ এই সাম্যের পরে যদি কোনো অসাম্য থেকে থাকে তাহলে তা অত্যন নগন্য Insignificant, Very Small ; তার মানে হচ্ছে , মানুষের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এক এবং সে মানুষ হিসেবে এক৷ এটি হলো নারী-পুরুষের সাম্যের প্রথম ভিত্তি৷
২. আমরা পুরুষরা গর্ব করি যে, আমাদের শারীরিক গঠন বোধহয় নারীর তুলনায় ভালো, আল্লাহ বোধহয় আমাদেরকে তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন এবং মেয়েরা আনকোয়ালিফায়েড৷ কিন্তু আল্লাহ একটি কথা কোরআনে খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে , সকল মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু প্রতিটি মানুষ ফার্ষ্ট ক্লাশ৷ যারা নামাজ পড়েন তারা এই আয়াতটা জানেন , সূরা ' ত্বীন'- এ আল্লাহ বলছেন (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) ' লাকাদ খালাক্বনাল ইনছানা ফি আহছানি তাক্বওয়ীম' ( নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামোতে-পুরুষকে বলেন নাই)৷ তার মানে আমাদের গঠনে পার্থক্য আছে , আমরা এক না, আমরা ভিন্ন কাঠামোর৷ কিন্তু সবাই ফার্ষ্ট ক্লাস, স-বা-ই ফার্ষ্ট ক্লাস ৷ সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য, নতুন নারী আন্দোলনের জন্য অথবা নতুন মানব আন্দোলনের জন্য পুরুষদের এ কথা বলা ঠিক না যে , মেয়েদের স্ট্রাকচার খারাপ৷ আল্লাহ্ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন৷ আপনারা যারা মোমেন, যারা বিশ্বাসী-তারা এ কথা বলবেন না৷ সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্যের এটা হলো দ্বিতীয় প্রমাণ৷ মৌলিক এ কারণে বলছি যে , নারী-পুরুষের মধে ছোটোখাটো পার্থক্য বিদ্যমান৷
৩. আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলছেন যে, সকল মানুষ এক পরিবারের৷ আদম এবং হাওয়া পরিবারের৷ সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন , "হে মানব জাতি , সেই রবকে তুমি মানো যিনি তোমাদেরকে একটি মূল সত্ত্বা (নফস) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্ত্বা থেকে তার সাথীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই দুই জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন"৷ তার মানে আমরা এক পরিবারের৷
আমরা হচ্ছি বনি আদম৷ আদমের সন্তান৷ আল্লাহ পাক কোরআন শরীফে অন্ততঃ ২০/৩০ বার বলেছেন , ' ইয়া বনি আদামা' ( হে আদমের সন্তানেরা)৷ বাপ-মা এবং সন্তানেরা মিলে যেমন পরিবার তৈরী হয়, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জাতি একটি পরিবার৷ সব পরিবারের ওপর হলো মানব জাতির পরিবার৷ তার মানে আমাদের মৌলিক সম্মান ও মর্যাদা , তা সমান৷ ছোট খাটো কারণে আমাদের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়৷ তবে জাগতিক মর্যাদা আসল মর্যাদা না৷
আইনের ভাষায় যেমন বলা হয়, আইনের চোখে সকল মানুষ সমান, তেমনি আল্লাহর কাছেও সবাই সমান৷ আল্লাহ্র কাছে সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলো ' তাক্বওয়া' ৷ আল্লাহ বলেন নাই যে, তার কাছে পুরুষ সম্মানিত বা নারী সম্মানিত৷ আল্লাহ বলছেন, ' ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি (আল্লাহর কাছে), ' আতক্বাকুম' ( যে মেনে চলে আল্লাহকে)৷ আল্লাহ্র কাছে যদি মর্যাদার এই ভিত্তি হয়, তাহলে মানুষের পার্থক্যে কি কিছু যায় আসে? আল্লাহ বলছেন তিনি ' তাক্বওয়া' ছাড়া (আল্লাহকে কে মানে আর কে মানেনা) কোনো পার্থক্য করেন না৷ অতঃপর আমরা এক পরিবারের সন্তান, আমাদের মৌলিক মর্যাদা সমান৷ (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১৩) আরেকটি কথা, কোরআনের সূরা নিসার একটি আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলছেন "এবং ভয় পাও সেই আল্লাহকে বা মান্য করো সেই আল্লাহকে , যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবী করে থাক৷ এবং ভয় পাও ' গর্ভ'- কে বা ' মা'- কে৷ আল্লাহ বলছেন ' গর্ভ'- কে ভয় পাও৷ কোরআন শরীফের এই আয়াতটির তফসিরে সৈয়দ কুতুব নামে মিশরের একজন বিখ্যাত আলেম লেখেন , এই ভাষা পৃথিবীর কোনো সাহিত্যে কোরআনের আগে লেখা হয় নাই৷ আল্লাহ ' গর্ভ '-কে ভয় করতে বলে মা '- কে সম্মান করার কথা বলেছেন, নারী জাতিকে সম্মান করার কথা বলেছেন৷ সুতরাং আমাদের মৌলিক সামাজিক মর্যাদা এক্ষেত্রেও সমান বলে প্রতীয়মান হলো৷ এটা আমাদের নতুন আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রমাণ৷
৪. আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সময় বলে দিলেন যে, " তোমরা সবাই খলিফা"৷ তিনি বললেন, " ইন্নি জায়লুন ফিল আরদে খলিফা"৷ আল্লাহ বলেন নাই যে, নারী পাঠাচ্ছেন বা পুরুষ পাঠাচ্ছেন৷ এমনকি তিনি বলেন নাই যে , তিনি মানুষ পাঠাচ্ছেন; আল্লাহ বললেন, তিনি খলিফা পাঠাচ্ছেন৷ পাঠালেন মানুষ, বললেন খলিফা৷ মানুষকে তিনি খলিফা নামে অভিহিত করলেন৷ খলিফা মানে প্রতিনিধি৷ আমরা পুরো মানব জাতি হচ্ছি আল্লাহর প্রতিনিধি৷ পুরুষ , নারী নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাঁর প্রতিনিধি-আল্লাহর প্রতিনিধি৷ তবে এ কথা ঠিক যে , যদি আমরা গুণাহ্ করি, অন্যায় করি, খুন করি, অত্যাচার করি, জুলুম করি, ঈমান হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের খলিফার মর্যাদা থাকে না৷ কিন্তু মূলতঃ আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা৷ (কুরআন ২:৩০; ৩৫:৩৯)
এই খলিফার মর্যাদার মধ্যেই রয়েছে সকল ক্ষমতায়ন; যে ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলি৷ ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না৷ খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রত্যেক নারী এবং পুরুষের কিছু ক্ষমতা লাগবে৷ নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি এই খেলাফতের মধ্যে রয়েছে৷ শুধু নারী নয়, ' খেলাফত' শব্দের মধ্যে নারী, পুরুষ, গরিব, দুর্বল সকলের ক্ষমতায়নের ভিত্তি রয়েছে৷ সুতরাং নারী পুরুষ মৌলিক সাম্যের এটি হলো চতুর্থ প্রমাণ৷
ইসলাম চায় every man, every woman, every person should be empowered ; কিন্তু এই মুহ র্তে যদি নারীরা বঞ্চিত থেকে যায়, তবে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে৷ পুরুষরা কোনোদিন বঞ্চিত হলে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে৷ তবে যে বঞ্চিত তার কথা আমাদের আগে ভাবতে হবে ; নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বর্তমানে আমাদের আগে কাজ করতে হবে৷
আজকে আপনাদের আলোচনায় মেয়েদের আসল কাজ কি, তা নিয়ে কথা উঠেছে৷ তারা কি ঘরে বসে থাকবে? এমন প্রশ্ন উঠেছে৷ কোনো মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধানে ঘরে থাকতে চায়, তার সেটা করার অধিকার আছে৷ পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য৷ কিন্তু আল্লাহ কোথাও বলেন নাই যে, নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে , বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবে না৷ বরং আল্লাহ মূল দায়িত্ব নারী-পুরুষের একই দিয়েছেন৷ সূরা ' তওবা' র ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, নারী পুরুষের দায়িত্ব ৬টি৷ আয়াতটি এরকম: মোমেন পুরুষ এবং মোমেন নারী একে অপরের অভিভাবক (ওয়ালী) , একে অপরের বন্ধু, একে অপরের সাহায্যকারী (এই আয়াত কোরআন শরীফের সর্বশেষ সূরাসম হের একটি৷ উল্লেখিত বিষয়ে আগে যে সকল আয়াত আছে সেগুলোকে এই আয়াতের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে)৷ এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, নারী পুরুষ একে অপরের অভিভাবক, গার্জিয়ান৷ অনেকে বলে যে, নারী গার্জিয়ান হতে পারে না৷ কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, নারী গার্জিয়ান হতে পারবে৷ মূল কোরআনে এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই৷ নারী-পুরুষের নির্ধারিত ৬টি ডিউটি হলোঃ
ক. তারা ভালো কাজের আদেশ দিবে৷
খ. মন্দ কাজের ব্যাপারে নিষেধ করবে৷
গ. উভয়ে নামাজ কায়েম করবে৷
ঘ. যাকাত দিবে৷
ঙ. আল্লাহকে মানবে৷
চ. রসুলকে মানবে৷
এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের সকল ভাল কাজে অংশগ্রহণের কথা বলেছেন৷ এটাই ইসলামের নীতি৷ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন যে , যারা এই ৬টি দায়িত্ব পালন করবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত করবেন৷ কোরআনের বেশ কয়েকটি তফসির পড়ে এবং পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে রাসুলে পুরোপুরি বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে, এই ছয়টি দায়িত্বের মধ্যে নারী পুরুষ সবাই সমান৷ রাজনীতি , সমাজসেবা ইত্যাদি সব কাজই এ ৬টির আওতায় পড়ে৷
আমার মনে হয় আমরা ইসলামের মূল জিনিস পরিত্যাগ করে ছোট-খাটো জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি৷ মানুষের তৈরী বিভিন্ন কিতাবের ওপর নির্ভর করছি৷ আল্লাহর মূল কিতাবকে আমরা সেই তুলনায় গুরুত্ব দিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না৷ শেষে একটি কথা বলি , ইসলামকে যদি আপনারা অন্যের মাধ্যমে শেখেন , তবে আপনারা কখনোও মুক্তি পাবেন না৷ আপনাদেরকে কোরআনের পাঁচ-ছয়টি তাফসির নিজে পড়তে হবে৷ অনেকে অনুবাদের মধ্যে তাদের নিজেদের কথা ঢুকিয়ে দেয়৷ ফলে পাঁচ-ছয়টি বই পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন কোথায় মানুষের কথা ঢুকছে; আর আল্লাহর কথাটা কি৷ কয়েক রকম ব্যাখ্যা পড়লে আপনি ঠিক করতে পারবেন কোন ব্যাখ্যাটা ঠিক৷ মেয়েদের মধ্যে বড় তাফসিরকারক হয়নি৷ এটা মেয়েদের ব্যর্থতা , মেয়ে তাফসিরকারকদের থাকলে হয়তো gender bias হতো না৷ তবে কোরআন শরীফের কিছু তাফসীর আছে যেগুলো free from gender bias ; যেমন মোহাম্মদ আসাদের "দি ম্যাসেজ অব কোরআন"৷
লেখক সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ২৩তম উজ্জীবক প্রশিক্ষণে দেয়া শাহ্ আব্দুল হান্নানের বক্তব্যের সংকলিত অংশ৷

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া

লিখেছেন শাহ আব্দুল হান্নান  
দার্শনিকভাবে দেখলে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া, স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া৷ যিনি আমাকে বানিয়েছেন তাঁকে ভুলে যাওয়া৷ আল্লাহ নিজেই বলেছেন: "ইয়া আইয়্যুহাল ইনসানু মা গার্রাকা বি রাব্বিকাল কারিম" অর্থাৎ, হে মানুষ কিসে তোমাকে তোমার মহিমান্বিত রব সম্পর্কে উদাসীন করল? (৮২:৬ )সত্যিকার অর্থেই বেশীর ভাগ মানুষ বাস্তবে স্রষ্টাকে ভুলে গিয়েছে৷ ইউরোপ-আমেরিকায় নাস্তিকের সংখ্যা অনেক৷ রাশিয়া পূর্বে অফিসিয়ালি নাস্তিক ছিল৷ এখনও সেখানে নাস্তিকতার হার কম নয়, বরং অনেক হবে৷ অন্যদিকে যারা বিশ্বাসী বলে দাবী করে তাদের মধ্যেও অনেকে সন্দেহবাদী (skeptic)৷ অর্থাৎ বলবে না যে স্রষ্টা নেই, কিন্তু বাস্তবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে না বা তার আদেশ মেনে চলবে না৷ স্রষ্টাকে মেনে চলবে এরকম লোকের সংখ্যা খুব কম৷
খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে , তাদের মধ্যে স্রষ্টার কার্যকর আনুগত্য কম৷ সে তুলনায় মুসলমানদের অবস্থা ভালো৷ এখানে নাস্তিক নেই বললেই চলে এবং যারা বিশ্বাসী তারা কোন না কোন পর্যায়ে আমল করে৷ যারা নিজেদেরকে সেক্যুলার বলে দাবী করে , তাদেরও বেশীরভাগ একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত আমল করে৷ তারাও নামাজ পড়ে, ইফতার করে, সাহরী খায়, হালাল-হারাম দেখে চলে৷ তারাও কুরবানী, হজ্জ, ওমরা ও ঈদ পালন করে৷ সুতরাং মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের অনুশীলন তুলনামূলকভাবে ভাল৷
স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়ার ফলে দু'টি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একটি হলো বস্তুবাদ ও নাস্তিকতা। আরেকটি হলো গোড়া সেক্যুলারিজম - সেটিও স্রষ্টাকে প্রায় অস্বীকার করার কাছাকাছি একটি অবস্থা। বিশ্ব সংকটের মূলে কাজ করছে এ দু'টি - একদিকে বস্তুবাদ ও নাস্তিকতা এবং অন্যদিকে সেক্যুলারিজম।
স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়ার প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সেক্যুলারিজমের উপর দাড়িয়ে আছে। বর্তমান বিজ্ঞান শিক্ষাতে রয়েছে সেক্যুলারিজমের গভীর ছাপ। ইউরোপের পন্ডিতরা এমনকি বর্তমানে মুসলমান বিজ্ঞানীরাও তাদের বইগুলো 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' দিয়ে শুরু করেন না। কিন্তু মুসলমানরা যখন বিজ্ঞানে উন্নতি করল (চীন ও ভারত থেকে গ্রহন করে), তখন তারা অনেক দিকে বিজ্ঞানের বিস্তার ঘটাল। সেসময় ঐসব মুসলমানরা তাদের বিজ্ঞানের প্রত্যেক বইগুলো 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' দিয়ে শুরু করতেন। তারা স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলেন গভীরভাবে। কিন্তু ইউরোপীয় বিজ্ঞানিরা বিশ্বাসী না হওয়ায় (অথবা সেক্যুলার হওয়ায় কিংবা স্রষ্টায় বিশ্বাস করা তাদের কাছে একটি লজ্জার বিষয় হওয়ায়), তারা স্রষ্টার কথা উল্লেখ করেননা। আমাদের মুসলিম বিজ্ঞানীরা এটি এখন লিখতে পারেন। কিন্তু তারাও লিখছেননা। এখন না লেখা রেওয়াজ হয়ে গেছে। অথচ আগে লেখাটাই রীতি ছিল। এখন বিজ্ঞানের বইগুলোতে আল্লাহ বা গড শব্দের উল্লেখ নেই। স্রষ্টা (creator) শব্দটি লেখা হয় না। এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার। কোথাও কোথাও প্রকৃতি (Nature) শব্দের উল্লেখ আছে। কিন্তু এই প্রকৃতি কি সেটি একেবারেই স্পষ্ট নয়। তারা একবারও ভাবেনা যে, এসব প্রাকৃতিক আইন আছে কিভাবে, আইন প্রণেতা ছাড়া কি কোন আইন হয়? তারা নাকি খুব যুক্তিবাদী, কিন্তু আমি তো কোন যুক্তি দেখছি না।
আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক ভালো দিক আছে, অনেক অবদান আছে আমরা মানি। কিন্তু এর পেছনে কাজ করছে এমন একটি মন যেটি স্রষ্টার প্রশ্নে, আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়বাদীতায় ভুগছে। স্রষ্টাকে স্পষ্ট স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আল্লাহর নাম উল্লেখ করছে না। এটি উল্লেখ করা সভ্যতা বিরোধী মনে করছে। এটি একটি পশ্চাৎপদ ব্যাপার মনে করছে। এই যে ধারণা এটা আমাদের কালচারকে খারাপ করে ফেলছে। আমাদের কালচারে সংশয়বাদ ও নাস্তিকতার প্রভাব পড়ছে।
সমাজবিজ্ঞানেরও একই রকম অবস্থা। সমাজতত্ত্ব ধরেই নেবে যে ধর্ম একটি মানব সৃষ্ট বিষয়। অথচ তারা এভাবে দেখাতে পারত যে, স্রষ্টাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের একটি সামাজিক প্রবণতা বা সামাজিক মন দিয়েছেন। স্রষ্টার সার্বিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আমাদের মধ্যে সমাজবদ্ধ হবার মানসিকতা রয়েছে। এজন্য আমরা একতাবদ্ধ হই এবং সমাজ গঠন করি। শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যান্য সেক্টরেরও একই অবস্থা। যেমন নৃবিজ্ঞানও স্বীকার করছেনা যে , মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি করেছেন। এটিকে তারা একেবারেই বাদ দিয়ে দিচ্ছে। নৃবিজ্ঞান মানব সৃষ্টির ইতিহাস বের করার চেষ্টা করছে মাটি খুড়ে বের করা হাড় এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক চিহ্ন থেকে। এসব থেকে তারা যে ইতিহাস লিখছে তাতে তারা বলছে, মানুষ এমনি এমনিই হয়েছে; কোন স্রষ্টা নেই। এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, দারিদ্র বিশ্বের একটি বড় সংকট, দারিদ্রের জন্য মানুষের একটি বিরাট অংশ ভাল হতে পারেনা। এ সংকটের মূলেও রয়েছে ঐ আল্লাহকে না মানা, বস্তুবাদ এবং সেক্যুলারিজম।
মানুষ বস্তুবাদী হয়ে গেছে। গরীবের জন্য, দারিদ্র দূর করার জন্য কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সে উপলব্ধি করছেনা। অনেকেই দারিদ্র দূর করার জন্য ওয়াদা করে থাকে। আসলে তারা ওয়াদা করার জন্য ওয়াদা করে, কথা বলার জন্য বলে। সত্যিই কি কার্যকরভাবে তারা এগুলো চায়? বিশেষ করে দেশের পুঁজিবাদীরা এগুলো চায়না বলেই মনে হয়। কারণ পুঁজিবাদের তত্ত্বে গরীবের কথা নেই। প্রফিটের কথা আছে, মুক্ত বাজারের কথা আছে। সেখানে সরকারী হস্তক্ষেপ না করার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে বাজারের বিকৃতি (Market distortion) দূর করার কথা পুঁজিবাদী তত্ত্বের কোথাও নেই। গরীবের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে এটা পুঁজিবাদের কোথাও বলা নেই। যদিও এটা এখন পুঁজিবাদী দেশে করা হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা তারা পুঁজিবাদের কাঠামো থেকে বের হয়ে এসেই নিচ্ছে ।
কলোনিয়ালিজম এবং ইম্পেরিয়ালিজমও এসেছে বস্তুবাদ থেকেই। নিজের ভোগ ও জাতির ভোগের প্রেরণা থেকেই এসবের উৎপত্তি। এসবকিছুর মূল উদ্দেশ্য মানুষকে শোষণ (exploit) করা। এই যে বস্তুবাদী স্বার্থপরতা এবং পুঁজিবাদ - এসব পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। এসবকিছু মিলে মানুষকে দায়িত্বহীন বানিয়েছে , তাকে ভোগবাদী করে তুলেছে। দায়িত্বশীল কাদের বলা যেতে পারে? যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং দুনিয়াকে এক্সপ্লয়েট করেনা। সুতরাং সকল সমস্যার মূল কারণ যদি বলতে হয়, আমি বলব স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া। এজন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলরা আহবান করেছেন আল্লাহকে মানো এবং বল, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' - আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে মানুষের মধ্যে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। মুসলিমদের এমনকি অমুসলিমদের জন্যও বলবো, যে কোন ধর্মের প্রতি বিশ্বাস নাস্তিকতা থেকে ভাল। কারণ প্রত্যেক ধর্মের একটা এথিক্স বা নীতিবোধ আছে। নাস্তিকতার কোন নীতিবোধ নেই। সে তো নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন মনে করে। সে বিশ্বাস করে তার কোন বিচার হবে না, তার কোন জবাবদিহিতা নেই; সুতরাং দুনিয়ায় যা ইচ্ছা সে করতে পারে। এ ধরণের লোক সমাজের জন্য ভয়ংকর। এজন্য সবার মধ্যে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহকে চেনাতে হবে যতদূব সম্ভব। সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবেই সমাজ তথা বিশ্ব থেকে স্বার্থপরতা দূর হতে পারে, মূল রোগ তথা মূল সমস্যা দূর হতে পারে।