কে এই মনীষা হাফিজ প্যাটেল ?
========================================================
Dewsbury biggest Tabligi mosque, ইংল্যন্ড দারুল উলুম মাদ্রাসা সহ গোটা ইউরোপে হাজার হাজার মসজিদ,মাদ্রাসা, মার্কাজ ও ইসলামী সেন্টার প্রতিষ্টাতা যিনি
========================================================
১৯৫০ সালের শুরুর দিকে আল্লাহর পথের অমর দা'য়ী হযরতজী মাওলানা ইউসুফ ছাব রহ.- হাফেজ প্যাটেল রহ কে দিয়ে ইউরোপে জামাত পাঠিয়ে হেদায়ত দিলেন, "হাফিয সাহেব, মানুষ চেষ্টা করতেছে মক্কা মদিনাকে ইউরোপ বানাবে। এমনভাবে মেহনত কর যেন ইউরোপ মক্কা মদিনার মত হয়ে যায়।" তিনি হযরতজীর কথাকে প্রতি মুহুর্তে মাথায় রেখেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ইউরোপের দেশগুলোতে মাইনাস ঠান্ডায় যেখানে কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পেত না তখন বরফের হিম পাথর ডিঙ্গিয়ে খুব ভোরে কিংবা গভীর রজনীতে তারা দরজার কারো নক করার আওযাজ পেত। দরজা খুলে বিস্ময়ে মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যেত, যে তাদের সামনে হাফেজ প্যাটেল ছাব রহ দাড়িয়ে আছেন।
কেউ কেউ তাকে এই অবস্থায় দেখে কাঁদে
ফেলত।তিনি কপালে চুমু খেয়ে বলতেন, দ্বীন
মান কামিয়াব হয়ে যাবে। গতকাল তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা ছিল ইউরোপে তার দাওয়াতের কাজের প্রতিদিনের দৃশ্য। নবীদের ত্বরিকায় দ্বারে দ্বারে বারেবারে গিয়ে তিনি ইউরোপে ইসলামকে প্রতিষ্টা করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।
এই পৃথিবীর ১৪০০ বছর ধরে সাক্ষি, ইসলামের দাওয়াতের কাজকে যারাই কাজ বানিয়ে দ্বীনের তাকাজা নিয়ে করেছে তাঁরাই দুনিয়া আখিরাতে কামিয়াব হয়ে গেছেন ।তাদের জানাজা , তাদের জন্য শোক , তাদের প্রতি উম্মতের ভালবাসা তাদের রেখে যাওয়া মেহনতের ফসল,এই সবই সাক্ষী দেয় যে , তারা কতটা কামিয়াব !
প্যাটেল সাহেব রহ ছিলেন তেমনি একজন।
১৯৫০ সালে প্রথম ইউরোপে তিনি প্রথম জামাত নিয়ে গেলে একটি মসজিদ খুঁজে বের করতে পারেন নি। জামাত নিয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও মেহনত করার ফসল আজ গোটা ইউরোপে হাজার হাজার মসজিদ , মাদ্রাসা, মার্কাজ এমনকি বৃটেনের মতো জায়গায় গড়ে উঠেছে, শরিয়া ব্যাংক, প্রতিদিন চলছে হাজারো জামাত। এসব কিছুর সূতিকাগার ছিলেন হাফেজ আহমদ প্যাটেল রহ। তিনিই পশ্চিমা দেশে ইসলামী জাগরনের বীজ বপন করেছিলেন সর্ব প্রথম তা অন্কুরিত হয়ে ক্রমশ তার নিরিবিচ্ছন্ন পরিচর্যায় আজ পাতা পল্লবে বিকশিত হয়ে বিশাল মহিরূহের ন্যায় ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে ইউরোপের জীবন জমিনে।
ভারতের গুজরাট শহরের এক ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে তার জন্ম ১৯১৯ সালে। দারুল উলুম সাহরানপুর মাদরাসায় পড়ালেখা শেষ করেই ড়বাবর হাত ধরে যৌবন বয়েসে আরব বনিকদের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ঘন ঘন মদীনা সঠর কালে একদিন দেখলেন রাসুলের রওজার পাশেই এক লোক অঝোড়ে কাঁদছে। তাঁর হৃদয় বিগলিত কান্না দেখে হাফেজ প্যাটেল অনুমান করলেন, হয়তো পার্থিব কোনো প্রয়োজনে লোকটি এভাবে কাঁদছে। কাছে গিয়ে বললেন : ভাই! আপনার কি টাকা লাগবে? অথবা আমি আপনাকে
অন্য কোনোভাবে সাহায্য করবো? কথা শুনে লোকটি তার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তাঁর
দৃষ্টিতে এমন একটি আলো ছিলো, যার ফলে প্যাটেল তাঁর কথা শুনতে অপারগ হয়ে গেলাম। যখন তাঁর কথা শুনলাম তৎক্ষনাত তাঁর সাথে আল্লাহ'র রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। দুনিয়ার বব্যবসা ছেড়ে সেই থেকে আখেরাতের ব্যবসায় নেমে পড়লেন। এই দাওয়াতের ব্যবসাই ককরেছেন জীবনের শেষ নিঃশ্বস পর্যন্ত। সেই লোকটি ছিলেন, তাবলীগের ইমাম গাজ্জালি খ্যাত মদীনা শরীফের আজীবন আমীর হযরত মাওলানা সাঈদ খান রহ।
প্যাটেল রহ সেই কাহিনী শুনিয়ে বলতেন,ওইসময় আমি নিয়ত করলাম যে,
আজ থেকে আজীবন দাওয়াতের কাজকে
নিজের দায়িত্ব হিসেবে আদায় করবো।
Dewsbury হতে Badford প্রতিদিন ১০ মাইল হেঁটে বরফ , মাইনাস ঠান্ডা ও গরমে উম্মতের দরজার দরজার নক করে দাওয়াতের কাজ করে করে ৯২ বছর বয়সে মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যখানে লন্ডন মারকাজে গত জুমাবার শব গুজারির রাতে হাজারো মানুষের
ইজতিমাতে বিদায় হয়ে গেলেন হাফিজ সাহেব ।
সাধারন একজন ইমাম দাওয়াতের কাজ করে করে ভিসা প্রাপ্ত ৩৮ পেইজের বিশ্বব্যাপি সফরের ৩টি পাসপোর্ট সাক্ষি রেখে Dewsbury biggest Tabligi mosque এবং দারুল উলুম মাদ্রাসা সহ অসংখ্য মাদ্রাসা , মসজিদ স্হাপন করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন আমাদের এই দা'য়ী । আজ ইংল্যান্ড এর মতো জায়গায় সুবিশাল মসজিদে দাওয়াতের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় প্রত্যেকটি ইউরোপিয়ান দেশে মারকায রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা'র হকুমে এই একজন মানুষের মেহনত আর কোরবানীতে এতো কিছু হয়েছে, ভাবতে অবাক
লাগে। বলতে হয়, তাঁর মেহনত আর চোখের
অশ্রু আজ ইউরোপের চিত্র বদলে দিচ্ছে।তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন বাকিয়াতুস সালিহাত৷ লাখ লাখ আল্লাহর দরবাশ্ররে সিজদাহ দিতে শিখেছেন এমন
এক কাফেলা তিনি তৈয়ার করে গেলেন৷ তিনি একজন সফল মুবাল্লিগ৷ লাখো সাদা চামরার খ্রিষ্টানকে ইসলামের ছায়াতলে নিঢে আসার প্রাণ শক্তি ছিলেন তিনি। আধুনিক ইউরোপে ইসলামি জাগরনের কিংবদন্তির সিপাহসালার ছিলেন এই মনীষা।র্ইউরোপের আধুনিক সভ্যতার অন্ধ্যকারে তিনি কালেমা, নামায, ইলম ও যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, সহীহ নিয়ত এবং খুরুজ ফি সাবিলিল্লাহর যে আলো ছড়িয়ে গেলেন তা আগামী দিনে গোটা ইউরোপকে ইসলামের পদ চুম্বন করাবে।
উনার খাদেম বলেন - বিগত ৭০ বছর নিয়মিত
তাহাজ্জুতে উম্মতের জন্য কেঁদেছেন , গাশত
করেছেন এবং তরুনদের কপলে চুমু খেয়ে বলতেন,কোথায় যাচ্ছ ভাই, তুমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালামের উম্মত! দ্বীন মানো কামিয়াব হয়ে যাবে ।
কি লিখব? আমি ভাষাহীন। টঙ্গির ইজতেমায় বহুবার কাছে থেকে দেখেছি বড়দের সাথে এই মহান ওলীকে। আমি কার দিকে চেয়ে ভাবতাম, উনিতো যুগের শাহজালাল। আমরা সবাই যানি
ইউরোপের মানুষ ব্যস্ত।কাজ আর কাজ।কারও হাতে একবিন্দু সময় নেই। সেই
ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত দেশ ইংল্যান্ডের লন্ডন সিটি থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে শুক্রবার আসরের পর ইউরোপ তাবলীগ জামাতের আমীর হাফিজ প্যাটেল রহ: -এর জানাযা অনুষ্ঠিত হলো। বিবিসিতে তার মৃত্যু সংবাদ অবাক চোখে দেখলাম। এতো এতো মানুষ!!! ভাবছি, যদি ছুটির দিন হতো কিংবা লন্ডন শহরে হতো, তবে না জানি কতো মানুষ হতো!!!
যার মৃত্যু সংবাদ শুনে গতকাল থেকে ইউরোপে মুসলিম ঘরে ঘরে কান্নার রোল পরে গেছে। বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা সহ পৃথিবীর এমন কোন প্রভাবশালী গনমাধ্যম নেই যেখানে তার মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বেরর সাথে কাভারেজ পায়নি। মুসলিম বিশ্বর শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা শোক প্রকাশ করেছেন। বৃটেনের রানী এ্যলিজাবেথ সহ নানান দেশর রাষ্ট প্রধানরা শোক জানিয়েছেন। পোপ জন পল এক মিনিট দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার
প্রতি। তিনি তার শোক বার্তায় বলেছেন, প্যাটল এমন এক বিদগ্ধ মুসলিম লিডার, যিনি ইসলামের বানী নিয়ে আমার কাছে পর্যন্ত এসেছিলেন।" এতেই প্রমানিত হয় তার শক্তিশালী এখলাছওয়ালা দাওয়াকের মেহনত গোটা ইউরোপে কতোটা প্রভাব ফেলেছিল।গতকাল তার শেষ বিদায় ছিল আধুনিক ইউরোপের সর্ববৃহৎ জানাজার
নামাজ। লাখো মানুষের চোখের পানি আর চাপা কান্নার আর্তনাদে তাকে শমাহিত করা হয়। আজ এতিম, একজন অবিভাক হারা তার হাতে ইসলাম গ্রহনকারী ইউরোপের লাখ লাখ নও মুসলিমকে শান্তনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
লন্ডন ব্রাডফোর্ড মসজিদের ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ ইয়াসির আল হানাফী লিখেছেন : 'আমি এতো বিশাল জানাযা ইতিপূর্বে দেখিনি'।
মাসআলা অনুযায়ী তো জানাযা ফরজে কেফায়া। তবুও তো.....।
বিশাল জনসমাগম প্যাটেল সাহেবের প্রতি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব, মমতা, ভালোবাসারই প্রমাণ। যেই মানুষটা উম্মাহ'র জন্য পুরো জীবন কুরবানি করেছেন, শত ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে তাঁর জানাযায় উপস্থিত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হাজারও মানুষ। লন্ডনে দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে যুক্ত মানুষদের ধন্যবাদ দিতে হয়।
বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে, ব্রিটেনের প্রভাবশালী মুসলিম লিডার ৯২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। একাধিক কমিউনিটি নেতার বক্তব্য পড়লাম। প্রায় সবাই একই কথা বলেছেন যে, হাফিজ প্যাটেল সাহেবের মৃত্যুতে কেবল ইউরোপ নয়, বিশ্বের মুসলমানরা এক দরদী দাঈ -কে হারিয়েছেন। তাঁর হৃদয়ে দরদ ছিলো। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো, এমন অনেকেই বলেছেন : তাঁর কাছে মানুষদের নামের একটি তালিকা তাকতে । তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নাম ধরে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি দোয়া করতেন।তার হৃদয়গাহী মোনাজাত শুনে কত মানুষের জীবন বদল হয়েছে খোদাই ভাল জানেন। তিনি যেন মোনাজাতে মাহবুবে হাকীকীর সাথে প্রেমালাপ করতেন। তাই তো এক মাওলানা সাহেব
লিখেছেন : কোথায় পাবো এমন দরদী পিতা! কে এখন চোখের অশ্রু ফেলে দোয়া করবে!
দয়াময় তার কবরকে নুর দিয়ে ভরে দাও। আমাদেরকেও তার দেখানো পথে দ্বীনের জন্য কবুল করে নাও।
========================================================
Dewsbury biggest Tabligi mosque, ইংল্যন্ড দারুল উলুম মাদ্রাসা সহ গোটা ইউরোপে হাজার হাজার মসজিদ,মাদ্রাসা, মার্কাজ ও ইসলামী সেন্টার প্রতিষ্টাতা যিনি
========================================================
১৯৫০ সালের শুরুর দিকে আল্লাহর পথের অমর দা'য়ী হযরতজী মাওলানা ইউসুফ ছাব রহ.- হাফেজ প্যাটেল রহ কে দিয়ে ইউরোপে জামাত পাঠিয়ে হেদায়ত দিলেন, "হাফিয সাহেব, মানুষ চেষ্টা করতেছে মক্কা মদিনাকে ইউরোপ বানাবে। এমনভাবে মেহনত কর যেন ইউরোপ মক্কা মদিনার মত হয়ে যায়।" তিনি হযরতজীর কথাকে প্রতি মুহুর্তে মাথায় রেখেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ইউরোপের দেশগুলোতে মাইনাস ঠান্ডায় যেখানে কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পেত না তখন বরফের হিম পাথর ডিঙ্গিয়ে খুব ভোরে কিংবা গভীর রজনীতে তারা দরজার কারো নক করার আওযাজ পেত। দরজা খুলে বিস্ময়ে মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যেত, যে তাদের সামনে হাফেজ প্যাটেল ছাব রহ দাড়িয়ে আছেন।
কেউ কেউ তাকে এই অবস্থায় দেখে কাঁদে
ফেলত।তিনি কপালে চুমু খেয়ে বলতেন, দ্বীন
মান কামিয়াব হয়ে যাবে। গতকাল তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা ছিল ইউরোপে তার দাওয়াতের কাজের প্রতিদিনের দৃশ্য। নবীদের ত্বরিকায় দ্বারে দ্বারে বারেবারে গিয়ে তিনি ইউরোপে ইসলামকে প্রতিষ্টা করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।
এই পৃথিবীর ১৪০০ বছর ধরে সাক্ষি, ইসলামের দাওয়াতের কাজকে যারাই কাজ বানিয়ে দ্বীনের তাকাজা নিয়ে করেছে তাঁরাই দুনিয়া আখিরাতে কামিয়াব হয়ে গেছেন ।তাদের জানাজা , তাদের জন্য শোক , তাদের প্রতি উম্মতের ভালবাসা তাদের রেখে যাওয়া মেহনতের ফসল,এই সবই সাক্ষী দেয় যে , তারা কতটা কামিয়াব !
প্যাটেল সাহেব রহ ছিলেন তেমনি একজন।
১৯৫০ সালে প্রথম ইউরোপে তিনি প্রথম জামাত নিয়ে গেলে একটি মসজিদ খুঁজে বের করতে পারেন নি। জামাত নিয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও মেহনত করার ফসল আজ গোটা ইউরোপে হাজার হাজার মসজিদ , মাদ্রাসা, মার্কাজ এমনকি বৃটেনের মতো জায়গায় গড়ে উঠেছে, শরিয়া ব্যাংক, প্রতিদিন চলছে হাজারো জামাত। এসব কিছুর সূতিকাগার ছিলেন হাফেজ আহমদ প্যাটেল রহ। তিনিই পশ্চিমা দেশে ইসলামী জাগরনের বীজ বপন করেছিলেন সর্ব প্রথম তা অন্কুরিত হয়ে ক্রমশ তার নিরিবিচ্ছন্ন পরিচর্যায় আজ পাতা পল্লবে বিকশিত হয়ে বিশাল মহিরূহের ন্যায় ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে ইউরোপের জীবন জমিনে।
ভারতের গুজরাট শহরের এক ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে তার জন্ম ১৯১৯ সালে। দারুল উলুম সাহরানপুর মাদরাসায় পড়ালেখা শেষ করেই ড়বাবর হাত ধরে যৌবন বয়েসে আরব বনিকদের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ঘন ঘন মদীনা সঠর কালে একদিন দেখলেন রাসুলের রওজার পাশেই এক লোক অঝোড়ে কাঁদছে। তাঁর হৃদয় বিগলিত কান্না দেখে হাফেজ প্যাটেল অনুমান করলেন, হয়তো পার্থিব কোনো প্রয়োজনে লোকটি এভাবে কাঁদছে। কাছে গিয়ে বললেন : ভাই! আপনার কি টাকা লাগবে? অথবা আমি আপনাকে
অন্য কোনোভাবে সাহায্য করবো? কথা শুনে লোকটি তার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তাঁর
দৃষ্টিতে এমন একটি আলো ছিলো, যার ফলে প্যাটেল তাঁর কথা শুনতে অপারগ হয়ে গেলাম। যখন তাঁর কথা শুনলাম তৎক্ষনাত তাঁর সাথে আল্লাহ'র রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। দুনিয়ার বব্যবসা ছেড়ে সেই থেকে আখেরাতের ব্যবসায় নেমে পড়লেন। এই দাওয়াতের ব্যবসাই ককরেছেন জীবনের শেষ নিঃশ্বস পর্যন্ত। সেই লোকটি ছিলেন, তাবলীগের ইমাম গাজ্জালি খ্যাত মদীনা শরীফের আজীবন আমীর হযরত মাওলানা সাঈদ খান রহ।
প্যাটেল রহ সেই কাহিনী শুনিয়ে বলতেন,ওইসময় আমি নিয়ত করলাম যে,
আজ থেকে আজীবন দাওয়াতের কাজকে
নিজের দায়িত্ব হিসেবে আদায় করবো।
Dewsbury হতে Badford প্রতিদিন ১০ মাইল হেঁটে বরফ , মাইনাস ঠান্ডা ও গরমে উম্মতের দরজার দরজার নক করে দাওয়াতের কাজ করে করে ৯২ বছর বয়সে মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যখানে লন্ডন মারকাজে গত জুমাবার শব গুজারির রাতে হাজারো মানুষের
ইজতিমাতে বিদায় হয়ে গেলেন হাফিজ সাহেব ।
সাধারন একজন ইমাম দাওয়াতের কাজ করে করে ভিসা প্রাপ্ত ৩৮ পেইজের বিশ্বব্যাপি সফরের ৩টি পাসপোর্ট সাক্ষি রেখে Dewsbury biggest Tabligi mosque এবং দারুল উলুম মাদ্রাসা সহ অসংখ্য মাদ্রাসা , মসজিদ স্হাপন করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন আমাদের এই দা'য়ী । আজ ইংল্যান্ড এর মতো জায়গায় সুবিশাল মসজিদে দাওয়াতের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় প্রত্যেকটি ইউরোপিয়ান দেশে মারকায রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা'র হকুমে এই একজন মানুষের মেহনত আর কোরবানীতে এতো কিছু হয়েছে, ভাবতে অবাক
লাগে। বলতে হয়, তাঁর মেহনত আর চোখের
অশ্রু আজ ইউরোপের চিত্র বদলে দিচ্ছে।তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন বাকিয়াতুস সালিহাত৷ লাখ লাখ আল্লাহর দরবাশ্ররে সিজদাহ দিতে শিখেছেন এমন
এক কাফেলা তিনি তৈয়ার করে গেলেন৷ তিনি একজন সফল মুবাল্লিগ৷ লাখো সাদা চামরার খ্রিষ্টানকে ইসলামের ছায়াতলে নিঢে আসার প্রাণ শক্তি ছিলেন তিনি। আধুনিক ইউরোপে ইসলামি জাগরনের কিংবদন্তির সিপাহসালার ছিলেন এই মনীষা।র্ইউরোপের আধুনিক সভ্যতার অন্ধ্যকারে তিনি কালেমা, নামায, ইলম ও যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, সহীহ নিয়ত এবং খুরুজ ফি সাবিলিল্লাহর যে আলো ছড়িয়ে গেলেন তা আগামী দিনে গোটা ইউরোপকে ইসলামের পদ চুম্বন করাবে।
উনার খাদেম বলেন - বিগত ৭০ বছর নিয়মিত
তাহাজ্জুতে উম্মতের জন্য কেঁদেছেন , গাশত
করেছেন এবং তরুনদের কপলে চুমু খেয়ে বলতেন,কোথায় যাচ্ছ ভাই, তুমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালামের উম্মত! দ্বীন মানো কামিয়াব হয়ে যাবে ।
কি লিখব? আমি ভাষাহীন। টঙ্গির ইজতেমায় বহুবার কাছে থেকে দেখেছি বড়দের সাথে এই মহান ওলীকে। আমি কার দিকে চেয়ে ভাবতাম, উনিতো যুগের শাহজালাল। আমরা সবাই যানি
ইউরোপের মানুষ ব্যস্ত।কাজ আর কাজ।কারও হাতে একবিন্দু সময় নেই। সেই
ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত দেশ ইংল্যান্ডের লন্ডন সিটি থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে শুক্রবার আসরের পর ইউরোপ তাবলীগ জামাতের আমীর হাফিজ প্যাটেল রহ: -এর জানাযা অনুষ্ঠিত হলো। বিবিসিতে তার মৃত্যু সংবাদ অবাক চোখে দেখলাম। এতো এতো মানুষ!!! ভাবছি, যদি ছুটির দিন হতো কিংবা লন্ডন শহরে হতো, তবে না জানি কতো মানুষ হতো!!!
যার মৃত্যু সংবাদ শুনে গতকাল থেকে ইউরোপে মুসলিম ঘরে ঘরে কান্নার রোল পরে গেছে। বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা সহ পৃথিবীর এমন কোন প্রভাবশালী গনমাধ্যম নেই যেখানে তার মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বেরর সাথে কাভারেজ পায়নি। মুসলিম বিশ্বর শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা শোক প্রকাশ করেছেন। বৃটেনের রানী এ্যলিজাবেথ সহ নানান দেশর রাষ্ট প্রধানরা শোক জানিয়েছেন। পোপ জন পল এক মিনিট দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার
প্রতি। তিনি তার শোক বার্তায় বলেছেন, প্যাটল এমন এক বিদগ্ধ মুসলিম লিডার, যিনি ইসলামের বানী নিয়ে আমার কাছে পর্যন্ত এসেছিলেন।" এতেই প্রমানিত হয় তার শক্তিশালী এখলাছওয়ালা দাওয়াকের মেহনত গোটা ইউরোপে কতোটা প্রভাব ফেলেছিল।গতকাল তার শেষ বিদায় ছিল আধুনিক ইউরোপের সর্ববৃহৎ জানাজার
নামাজ। লাখো মানুষের চোখের পানি আর চাপা কান্নার আর্তনাদে তাকে শমাহিত করা হয়। আজ এতিম, একজন অবিভাক হারা তার হাতে ইসলাম গ্রহনকারী ইউরোপের লাখ লাখ নও মুসলিমকে শান্তনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
লন্ডন ব্রাডফোর্ড মসজিদের ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ ইয়াসির আল হানাফী লিখেছেন : 'আমি এতো বিশাল জানাযা ইতিপূর্বে দেখিনি'।
মাসআলা অনুযায়ী তো জানাযা ফরজে কেফায়া। তবুও তো.....।
বিশাল জনসমাগম প্যাটেল সাহেবের প্রতি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব, মমতা, ভালোবাসারই প্রমাণ। যেই মানুষটা উম্মাহ'র জন্য পুরো জীবন কুরবানি করেছেন, শত ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে তাঁর জানাযায় উপস্থিত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হাজারও মানুষ। লন্ডনে দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে যুক্ত মানুষদের ধন্যবাদ দিতে হয়।
বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে, ব্রিটেনের প্রভাবশালী মুসলিম লিডার ৯২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। একাধিক কমিউনিটি নেতার বক্তব্য পড়লাম। প্রায় সবাই একই কথা বলেছেন যে, হাফিজ প্যাটেল সাহেবের মৃত্যুতে কেবল ইউরোপ নয়, বিশ্বের মুসলমানরা এক দরদী দাঈ -কে হারিয়েছেন। তাঁর হৃদয়ে দরদ ছিলো। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো, এমন অনেকেই বলেছেন : তাঁর কাছে মানুষদের নামের একটি তালিকা তাকতে । তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নাম ধরে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি দোয়া করতেন।তার হৃদয়গাহী মোনাজাত শুনে কত মানুষের জীবন বদল হয়েছে খোদাই ভাল জানেন। তিনি যেন মোনাজাতে মাহবুবে হাকীকীর সাথে প্রেমালাপ করতেন। তাই তো এক মাওলানা সাহেব
লিখেছেন : কোথায় পাবো এমন দরদী পিতা! কে এখন চোখের অশ্রু ফেলে দোয়া করবে!
দয়াময় তার কবরকে নুর দিয়ে ভরে দাও। আমাদেরকেও তার দেখানো পথে দ্বীনের জন্য কবুল করে নাও।