খুৎবা
সকল প্রশংসা মহান আল্লহ তায়া’লার জন্য যিনি মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছেন; যাহাতে তাহাদের উপর তিনি তাঁহার ঐ সকল নেয়ামত ঢালিয়া দেন যাহা সময়ের আবর্তনে নিঃশেষ হয় না। ঐ সকল নেয়ামত এমন ভান্ডার সমুহে রহিয়াছে যাহাতে দান করার কারনে কম হয় না; যেখান পর্যন্ত মানুষের ধ্যান ধারণা পৌঁছতে পারে না। আল্লহ তায়া’লা মানুষের মধ্যে সর্ব প্রকার যোগ্যতার এমন উপাদান লুকাইয়া রাখিয়াছেন যাহাকে কাজে লাগাইয়া মানুষ রহমানের ভান্ডারসমূহ হইতে উপকৃত হইতে পারে। আর ঐ সকল যোগ্যতার দ্বারা তাহারা চিরস্থায়ী ভাবে জান্নাতে থাকার সৌভাগ্যও অর্জন করিতে পারে।
আল্লহ তায়া’লার রহমত এবং দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যিনি সকল নবী ও রসূলগনের সর্দার। যাঁহাকে গুনাহগারদের জন্য সুপারিশ করার মর্যাদা দান করা হইয়াছে। যাঁহাকে সমস্ত জগৎবাসীর জন্য রহমত বানাইয়া পাঠানো হইয়াছে। যাঁহাকে আল্লহ তায়া’লা লওহে মাহফুয ও কলম সৃষ্ট করার পূর্বে সকল নবী ও রসূলদের সর্দার এবং বান্দাদের প্রতি পয়গাম পৌঁছানোর সম্মান দান করার জন্য নির্বাচন করিয়াছেন। আর যাঁহাকে আল্লহ তায়া’লা এই জন্য নির্বাচন করিয়াছেন যে, তিনি আল্লহ তায়া’লার বিশেষ ভান্ডারসমূহে রক্ষিত নেয়ামতসমূহের বিশদ বর্ণনা দান করিবেন। আর মহান আল্লহ তায়া’লা তাঁহাকে নিজ সত্তা সম্পর্কে এমন ইলম ও মারেফত দান করিয়াছেন যাহা আজ পর্যন্ত কাহারো জন্য উম্মোচন করেন নাই, এবং আপন মর্যাদাবান গুনাবলী তাঁহার উপর প্রকাশ করিলেন, যাহা কেহ জানিত না, না কোন ফিরিশতা, না কোন নবী। আর তাঁহার সিনা মোবারককে ঐ সকল যোগ্যতা বুঝিবার জন্য খুলিয়া দিলেন যাহা আল্লহ তায়া’লা মানুষের মধ্যে রক্ষিত রাখিয়াছেন, যে সকল স্বভাবগত যোগ্যতার দ্বারা বান্দা আল্লহ তায়া’লার নৈকট্য লাভ করে এবং ঐ সকল যোগ্যতার দ্বারা বান্দা তাহার দুনিয়া ও আখেরাতের বিষয়ে সাহায্য লাভ করে। আর আল্লহ তায়া’লা তাঁহাকে মানুষের দ্বারা প্রতি মুহূর্তে সম্পাদিত আমালসমূহের সংশোধন পদ্ধতির জ্ঞান দান করিয়াছেন। কেননা দুনিয়-আখেরাতের সফলতা লাভের ভিত্তি হইল আমালের সংশোধন, যেমন উভয় জাহানের বঞ্চনা ও ক্ষতির কারণ হইল আমালের খারাবী।
আল্লহ তায়া’লা সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের প্রতি সন্তুষ্ট হউন, যাঁহারা সর্বাপেক্ষা পবিত্র ও সম্মানিত নবীর নিকট হইতে ঐ সমস্ত এলেমকে কামেল ও পূর্ণাঙ্গরূপে অর্জন করিয়াছেন যাহার পরিমাণ গাছের পাতা ও বৃষ্টির ফোঁটাসমূহ অপেক্ষা অধিক এবং যাহা নবুয়তের চেরাগ হইতে প্রতি মুহূর্তে প্রকাশিত হইত। অতঃপর তাঁহারা যেইরূপে মুখস্থ করা ও সংরক্ষণ করার হক ছিল তদ্রূপ মুখস্থ করিয়াছেন এবং সংরক্ষণ করিয়াছেন। তাঁহারা সফরে ও বাড়িতে থাকা অবস্থায় রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুহবতে রহিয়াছেন এবং তাঁহার সহিত দাওয়াত ও জিহাদে এবং ইবাদাত, মোয়ামালা ও মুয়াশারাতে শরিক রহিয়াছেন। অতঃপর ঐ সমস্ত আমালকে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে থাকিয়া তাঁহার তরীকায় আদায় করা শিখিয়াছেন।
সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের জামাতের জন্য মুবারাকবাদ, যাঁহারা কোন মাধ্যম ব্যতীত হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে সরাসরি ইলম ও উহার উপর আমাল শিখিয়াছেন। অতঃপর তাঁহারা এলেমসমূহকে শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন নাই বরং যে সমস্ত ইলম ও মারেফাত তাঁহাদের অন্তরে সংরক্ষিত ছিল এবং যে সমস্ত আমাল তাঁহারা করিতেন তাহা অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছাইলেন। সমগ্র জগতকে খোদাপ্রদত্ত ইলম ও রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে অর্জন করা রূহানী আমাল দ্বারা ভরিয়া দিলেন। ফলে সমগ্র জগত ইলম ও আলেমদের জন্য লালন কেন্দ্রে পরিণত হইল এবং মানুষ হেদায়াত ও নূরের ঝর্ণাধারায় রূপান্তিত হইয়া ইবাদাত ও খিলাফাতের ভিত্তির উপর আসিয়া গেল।