get-fans-468x60

Thursday, May 26, 2011

সুস্থ পরিবার ও সমাজ গঠনে ইসলাম

সুস্থ পরিবার ও সমাজ গঠনে ইসলাম
সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল পরিবারইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার শুধু একটি উত্তমসামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং একটি পবিত্র সংস্থাপরিবারের সুখ, শান্তি এবংপারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিকনৈতিক চরিত্র গঠনেরপ্রকৃষ্ট ক্ষেত্র হল পরিবারসামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্রকরেপবিত্র আল কোরআনে পারিবারিক সদস্যদের মুহসিনীন বা প্রাচীর ঘেরা দুর্গেঅবস্থানকারী সুরক্ষিত লোকজনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছেইসলামে পরিবার শুধুস্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়পরিবারের পরিসর আরও ব্যাপকনিকটাত্মীয়স্বজনও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ততাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দয়া, করুণা এবংসহানুভূতি তো আছেই, বাড়তি দায়িত্বশীলতার প্রশ্নও জড়িতস্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণসহযোগিতা ও স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তিও সর্বাঙ্গীণ উন্নতি; স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে চললে পারিবারিকপরিবেশ অনেকাংশে সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠেইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হল মানুষগড়ার মূল কেন্দ্র এবং সমাজ গঠনের প্রধান ভিত্তিএ জন্য পরিবার গড়ার ব্যাপারে ইসলামবিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে
আল্লাহতায়ালা দাম্পত্য জীবন গঠনেরপূর্বশর্ত হিসেবে স্বামীর জন্য বিবাহের আগে স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের জোগানদেয়ার যোগ্যতা অর্জন করার কথা বলেছেনপারিবারিক জীবনে প্রবেশ করার আগেই একজনপুরুষের উচিত তার স্ত্রীর ও ভবিষ্যবংশধরদের ভরণপোষণ করার মতো আর্থিক সচ্ছলতাঅর্জন করামহান আল্লাহপাক বলেন- আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব যথাবিধি তাদের (মা ওশিশুর) ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)এ আয়াতের ব্যাখ্যায়মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ·) বলেন, এ আয়াত দ্বারা এ কথা বোঝানো হয়েছে, শিশুকেস্তন্যদান মাতার দায়িত্ব, আর মাতার ভরণপোষণ ও জীবন-ধারণের অন্যান্য দায়িত্ব বহনকরবে পিতাসূরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পানকরাবেমাতা-পিতার ওপর সন্তানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হচ্ছে, একটি নির্দিষ্টবয়সে তার জন্য আলাদা শয়নের ব্যবস্থা করামহানবী (সা·) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদেরবয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তোমরা তাদের নামাজের জন্য আদেশ করআর দশ বছর বয়স হলেতাদের নামাজের জন্য তাগিদ দেবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করতে দেবে
হজরত লোকমান(·) নিজ পুত্রকে যে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে তার উল্লেখ হয়েছেএভাবে- হে বস নামাজ কায়েম কর, কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদেসবুর করনিশ্চয়ই এটি দৃঢ়তার কাজ। (সূরা লোকমান, আয়াত-১৭)শিশুরা নরম মাটির মতোশৈশবে যে মূল্যবোধ ও আদব আখলাকের পরিবেশে বেড়ে উঠবে, তাই পরবর্তী জীবনে স্থায়ী হয়েযায়এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়এ সময় মাতা-পিতা নিজেদের অনুসরণীয়ব্যক্তিত্ব দিয়ে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের প্রতিপালন করবেনহজরত দয়ালনবী (দ·) বলেছেন, পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হচ্ছে, তাকে উত্তম শিক্ষাদেয়া এবং সুন্দর একটি নাম রাখা। (বায়হাকি শরিফ)ছোটবেলা থেকেই শিশুর শিক্ষারব্যবস্থা করতে হবেএটি মাতা-পিতার ওপর ফরজএই কর্তব্য পালন না করলে গুনাহগার হতেহবে এবং আখেরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবেহজরত মহানবী (সা·) বলেছেন, দোলনাথেকে শিক্ষা শুরু করোতিনি মুসলিম শিশুকে দোলনায় দেখতে চেয়েছেনঅযত্ন-অবহেলায়ধুলাবালিতে নয়আর তাকে এ বয়স থেকেই আনন্দপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করতেবলেছেনশিশুকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালন-পালনের সঙ্গে তার মননশীলতার বিকাশওপ্রয়োজনএ ক্ষেত্রে অভিভাবককে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারমধ্যে মিথ্যা বলা, নাপাক থাকা, নামাজ না পড়া ইত্যাদি বিষয়গুলো না থাকেএ জন্য চাইসহায়ক পরিবেশপ্রিয়নবী (সা·) শিশুদের জ্ঞানদানের কথা বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদেরসাঁতার কাটা, এমনকি তীর চালানো পর্যন্ত শিক্ষা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন
ইসলামবলেছে, তুমি আয় বুঝে ব্যয় করদারিদ্র্য যেমন ইসলাম কামনা করে না, অনুরূপভাবেইসলামে বাহুল্য বর্জনের নির্দেশও রয়েছেকারণ সীমাহীন দারিদ্র্য অনেক ক্ষেত্রেমানুষকে কুফরির পথে ধাবিত করে, আবার সীমাহীন প্রাচুর্য আর অপরিকল্পিত সন্তান-সন্ততিও পারিবারিক সদস্য বৃদ্ধি পরিবারে অশান্তি ডেকে আনেঅনেক ক্ষেত্রে মানুষকে সত্য ওন্যায়ের পথ থেকে বিপথগামী করেহজরত নূরনবী (দ·) বলেছেন- তোমাদের প্রত্যেককেই একএকজন দায়িত্বশীল এবং সবাই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবেপুরুষ তারগৃহে দায়িত্বশীল, এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবেঅনুরূপভাবে নারী তার স্বামীগৃহেএকজন দায়িত্বশীল এবং দায়িত্বের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে’ (বুখারি ও মুসলিমশরিফ)তাই ইসলামী ঐতিহ্য রক্ষা ও বরকতময় পারিবারিক পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেচাইলে আমাদের কতিপয় বিষয়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে; · স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য ওপারিবারিক জ্ঞান ২· এক্ষেত্রে তাদের বয়সের সমতা ৩· আর্থিক সামর্থø · পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি সবার পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ৫· ইসলাম প্রবর্তিতউন্নততর ধারণা প্রয়োগ করা ইত্যাদি
যুগান্তর, ১১ এপ্রিল ২০০৮

কাদিয়ানী মতবাদ এবং খতমে নবুওয়াত


المساعد الشخصي الرقمي
مشاهدة النسخة كاملة : কাদিয়ানী মতবাদ এবং খতমে নবুওয়াত

Abu Afnan আবু আফ

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله و السلام على رسول الله أما بعد:

আরবসহ সমগ্র বিশ্ব তখন গভীর তিমিরে আচ্ছন্ন। সবর্ত্র বিরাজ করছে এক প্রকার গুমোট অস্থিরতা। এমনি এক মূহুর্তে মক্কার আকাশে নতুন এক সুর্যের আবির্ভাব হল। সে সূর্য হল নবুওয়তের সূর্য। আলোকিত হয়ে উঠল মক্কার আকাশ। ঘরে ঘরে পৌঁছতে লাগল আলোক রশ্মী। নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষকে সে আলোর পথে ডাকতে থাকলেন। অন্ধকারের অলি-গলি পার হয়ে অসংখ্য মানুষ খুঁজে পেলেন সত্যের পথ। ক্রমেই দিক-দিগন্তে আলোর পরিধী বাড়তে থাকল।
কিন্তু! আঁধারেই যাদের বসবাস তারা তো আলোকে সহ্য করতে পারেনা। বাদুড় তো চিরদিনই সূর্যের বিরোধীতা করবেই। তাই বলে সূর্য উঠা কি বন্ধ হয়ে যাবে?
একদল লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আওয়াজকে নিস্তদ্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। কিন্তু এ আওয়াজ তো বন্ধ হওয়ার নয়। বরং মরুভূমির প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার সাথে তা আছড়ে পড়ল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ফলে তারা হিংসা-বিদ্বেষ আর অন্তর জ্বালায় জলে-পুড়ে ছারখার হতে থাকল। এভাবে ইসলামের আলো আস্তে আস্তে বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করল। আল্লাহর বাণী চির সত্য। তিনি বলেন: “তারা তো মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণতা দান করবেনই যদিও কাফেরেরা তা অপছন্দ করে।” (সূরা আস সাফ্*ফ: ৮)
কিন্তু ওসব হিংসুক কাফেরের দল বসে রইল না। বরং নানা কুট কৌশল আর ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকল। কিভাবে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করা যায়। ফলে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইবনে সাবা নামক ইহুদীকে ঢুকিয়ে দেয়া হল। সে মুসলমানদের মাঝে বিভিন্ন দল-উপদল সৃষ্টি করে তাদেরকে বিভক্ত করে ফেলল। আলী (রাঃ) কে কেন্দ্র করে শিয়া দলের সৃষ্টি হল।
ইসলামের পোষাক পরে শত্রুঃ
এর পর মুসলমানদের এ বিভক্তির দূর্বলতাকে সুযোগ মনে করে তারা ইসলামী দেশগুলোতে সামরিক আক্রমনের মাধ্যমে দখল করে নেওয়ার জন্য সর্ব সর্বশক্তি নিয়োগ করল। কিন্তু আল্লাহর রহমত এবং অকুতভয় মুসলিম সৌনিকদের সাহসী প্রতিরোধে তারা বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে থাকে। পরিশেষে সামরিক দিক দিয়ে মুসলমানদের কাছে ব্যার্থ হওয়ার পর শত্রুরা আবার তাদের সেই পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে আসল। ইসলামী দেশগুলোতে ইসলামের পোষাক পরিয়ে বিভিন্ন দালাল তৈরী করল। ইরানে সে সমস্ত দালালদের একজন হল মির্যা হুসাইন বিন আলী বাহাঈ। সে বাাহাঈ দল সৃষ্টি করে ঘোষণা করল কুরআন ভুল-ভ্রান্তিতে ভরা। আরো ঘোষণা করল, সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়তকে বিলুপ্তকারী। কিন্তু মুসলমানগণ তার এ প্রকাশ্য ঘোষণার কারণে খুব সহজে তার আসল পরিচয় পেয়ে গেল। ফলে তাকে ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখান করায় তার এ ষড়যন্ত্রও মুখ থুবড়ে পড়ল।
ভন্ডামির নানান রূপঃ
গোলাম আহমাদ ছিল অত্যন্ত ধূর্ত ও চালবাজ। সে অত্যন্ত সুকৌশলে মুসলমানদের মাঝে তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তুার করতে থাকে। প্রথমে সে নিজেকে একজন মুজাদ্দিদ বা মহান সংস্কারক, তারপর ইমাম মাহদী, কখনো বা নিজেকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাবী করে। তারপর নিজেকে ‘ছায়া নবী’ সবশেষে একজন ‘পূর্ণ নবী’ বলে জোরেশোরে প্রচার চালাতে থাকে। শরীয়তের অনেক বিধান রহিত ঘোষণা করে এবং অনেক হুকুম-আকহাম রদবদল করতে থাকে। একদল লোককে তার অনুসারী হিসেবে পেয়ে যায়। তাদেরকে নিয়ে দল প্রতিষ্ঠা করে নাম দেয় ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’।
মুসলিম বিশ্ব এবং বাংলাদেশঃ
প্রায় সবকটি মুসলিম দেশে ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ ও এ দলের অনুসারী কাদিয়ানীদেরেেক সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের যাবতীয় বই-পুস্তক, ও কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে তাদেরকে আজো অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি । যার কারণে বর্তমানে তারা আমাদের দেশে প্রকাশ্যে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্রাজ্যবাদের শাষণ এবং ভন্ড নবীর আবির্ভাবঃ
অবিভক্ত ভারতে তখন সম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের শাষণের নামে শোষণ চলছে। তাদের যুলুম-নির্যাতনে মানুষ দিশেহারা। সর্বত্র বিদ্রোহের গুঞ্জরণ। মুসলমানগণ ইংরেজ শাষনের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনি একটি মূহুর্তে ইংরেজ শাষকগণ তাদের হাতে গড়া দালাল মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকেকে মুসলমানদেরকে মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিল। প্রথম পর্যায়ে সে নিজেরকে ইসলামের একজন একনিষ্ঠ খাদেম হিসেবে প্রকাশ করল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই নিজেকে আল্লাহর নবী হিসেবে ঘোষণা করল। তারপর যা হবার তাই হল। শুরু হল ইসলাম সম্পর্কে নানা অপব্যাখ্যা। আল্লাহ, রাসূল, নবী, নবুওয়াত, সাহাবয়ে কেরাম, কুরআন, ওহী, জিহাদ, মদ ইত্যাদি নানা বিষয়ে জঘণ্য বিভ্রান্তিমূলক এবং আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া শুরু করল। উপনেবিশবাদী বৃটিশ-বেনিয়াদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদকে নাজায়েয বলে ফাতাওয়া জারি করল।
যা হোক, নিম্নে আমরা কেবল ‘খতমে নবুওয়াত’ সর্ম্পকে তার অপব্যাখ্যা এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর জবাব সংক্ষেপে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ নবী নয় (!)ঃ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রচার করতে থাকে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ নবী নয় বরং যুগের চহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবেএবং অন্যান্য নবী ও রাসূলগণের মত সে ও একজন নবী এবং রাসূল।
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এর জবাবঃ
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ
﴿مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ﴾
“মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” (সূরা আহযাবঃ ৪০)
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা ইমাম ইবন্* কাসীর (রহঃ) বলেন, “অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তাঁর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে কোন নবী নাই। নবী যখন আসবেন না রাসুল আসার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (৩য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্টা, মিসরিয় ছাপা)
নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হলঃ
১মঃ বাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
((وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلَاثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي))
“আমার উম্মতর মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই।” ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। (তিরমিযী ৮/১৫৬ হাদীস নং ৩৭১০)
২য়ঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
))إِنَّ مَثَلِي وَمَثَلَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلَّا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ َاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلَّا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَة ُقَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ((
“আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি ঘর অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু ঘরের এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত!” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।” (বুখারী, হাদীস নং ৩২৭১ মুসলিম হাদীস নং ৪২৩৯)
৩য়ঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
))كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ((
“বনী ইসরাইলকে পরিচালনা করতেন তাদের নবীগণ। এক নবী মৃত্যু বরণ করলে আরেক নবী তার স্থানে এসে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে আমার পরে কোন নবী আসবে না; আসবে খলীফাগণ।”(সহীহ বুখারী)
৪র্থঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেনঃ ((أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي)) “মুসা (আঃ) এর নিকট হারুন (আঃ) যেমন তুমি আমার নিকট ঠিক তদ্রুপ। তবে আমার পরে কোন নবী নেই।” (বুখারী-৪০৬৪, মুসলিম হাদীস নং ৪৪১৮)
৫মঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
((لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ))
“আমার পরে কেউ নবী হলে উমার ইবনুল খাত্তাব নবী হতেন।” (সুনান তিরমিযী হাদীস নং-৩৬১৯)
৬ষ্ঠঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
((فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ((
“পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উপর ছয়টি বিষয়ে আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমাকে দেয়া হয়েছে অল্প শব্দে অনেক বেশী অর্থবোধক কথা বলার যোগ্যতা, আমি অনেক দূর থেকে শত্রুবাহিনীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয় প্রাপ্ত হই। গনিমত তথা পরাজিত শত্রুবাহিনীর ফেলে যাওয়া সম্পদ আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে। যমিনের মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং সেজদা প্রদানের স্থান বানানো হয়েছে। সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য আমাকে নবী বানানো হয়েছে এবং আমার মাধ্যমেই নবী আগমনের ধারাকে সমাপ্ত করা হয়েছে।” (মুসলিম হাদীস নং-৭১২)
এছাড়াও অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা দ্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আখেরী-সর্বশেষ নবী । তাঁর পরে কোন নবী আগমণ করবেনা।
পূর্ববর্তী সালাফে সালেহীন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। যুগে যুগে মুসাইলামা কায্*যাব, তুলাইহা, আসওয়াদ আনাসীর মত অনেক ভন্ড ও মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হয়েছে কিন্তু সবাইকে আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশম্পাতের অধিকারী হয়ে লাঞ্ছিত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে এবং তারই ধারাবহিকতায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও নিকৃষ্ট অবস্থায় পায়খানায় পড়ে মৃত্যবরণ করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
পরিশেষে, আহবান জানাব, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খতমে নবুওয়াত এবং এই কাদিয়ানী ফেতনা সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সাবধানতা Aej¤^b করতে হবে। যেন কোন অপশক্তি ইসলামের সুরম্য অট্টালিকায় প্রবেশ করে আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তথা ঈমান হরণ করতে না পারে। আল্লাহ আমাদেরকে হকের উপর জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত টিকে থাকার তৌফিক দিন। আমীন ॥