দাওয়াতি বন্ধুদের একটি বৈঠকে আমি অধম একজন
দরদি নওজোয়ান দাঈকে কারগুজারি শোনানোর জন্য দাড়াতে বললাম। সে কারগুজারি শুনাল এবং
অত্যন্ত দরদমাখা কথা বলল। সে বলে, এ হিন্দুস্তান এমন ভালোবাসাপূর্ণ এবং ভালবাসার
মূল্য প্রদানকারী রাষ্ট্র যে, এখানে ইসলামের চরম শত্রু এবং ইসলাম ও মুসলমানদের
শত্রুতায় তার বিষাক্ত ভাষা প্রয়োগকারীদেরও ঈদ বা যে কোন অনুষ্ঠানের দু চামচ মিষ্টি
সেমাই যথেষ্ট। এর দ্বারাই তারা তুষ্ট ও সন্তুষ্ট। ইসলামের ভয়ঙ্কর শত্রু কোনো
হিন্দু ভাইকেও যদি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেন এবং তাকে কয়েক চামচ মিষ্টি
দ্রব্য বা সেমই খাওয়ান তাহলে পরবর্তীতে কোনো সময় তার মুখ থেকে ইসলাম বা মুসলমানদের
সম্পর্কে বিদ্বেষ ও শত্রুতাপূর্ণ কোনো কথা শুনবেন না।
সে উদাহরণস্বরূপ শ্রদ্ধেয় সাদরশিনজির নাম উল্লেখ করে, যে নাকি
দুইবার আরএসএসের দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে চরম কঠোর
ভাষা ব্যবহার করতেন। ভুপালে কয়েকজন যুবক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আর
সেখানে বিশেষ অতিথি হিসাবে ঐ হিন্দু নেতাকে দাওয়াত করা হয়। এটা কোন বক্তৃতার
অনুষ্ঠান ছিল না, আর না তাতে ইসলাম সম্পর্কে কোন প্রচারপত্র বিলি করা হয় যা পড়ে
কারো মেধা ধোলাই করা হবে। তা কেবলই হিন্দু-মুসলমান একত্রিত হয়ে ঈদের শুভেচ্ছা
বিনিময় করার অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে সেমাই, খোরমা ইত্যাদি মিষ্টি দ্রব্য খাওয়ানো হয়।
এরপর সে নেতা একবছরেরও কিছু বেশি দিন জীবত ছিলেন কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদের
বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারন করেননি বরং এরপর থেকে প্রত্যেক বক্তৃতায়
প্রেম-ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধের আলোচনা করতেন। পরের বছর ঈদের সময় তিনি নিজেই
কর্তৃপক্ষকে ফোন করে বলেন, আমি পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি সংগ্রহ করেছি; আমি এবার
ঈদের নামায মুসলমান ভাইদের সাথে পড়তে চাই। তবে কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পরার্মদাতারা
তাকে এ বলে এ কাজ থেকে বিরত রাখেন যে, যদি আপনিই নামায পড়েন তবে আমাদের পুরো
রাজনীতি ভেস্তে যাবে। এ ঈদের কয়েক মাস পূবে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
ভালবাসার এ প্রতিদান দেওয়ার পরও কোন মুসলমান
ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ভালবাসার এ বিনিময় দেয় নি। অথচ সে সত্য দ্বীন ও ঈমানের দৌলত
থেকে বঞ্চিত হয়ে চিরস্থায়ী জাহান্নামে চলে গেল। তারপর আমরা নিজেদরকে অত্যাচরিত ও
তাদেরকে অত্যাচারি বলে অভিযোগ করে থাকি। আমার পীর ও মুর্শিদ হয়রত মাওলানা আলী মিয়া
নদবী রহ. বলতেন, আমরা কতই সৌভাগ্যবান যে, আমাদেরকে ভালোবাসাপূর্ণ এমন জাতির দাঈ
হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভালোবাসা ও শত্রুতার প্রতিদানের ক্ষেত্রে
এমন অতিরঞ্জন রয়েছে যে, নিজেদের কল্যাণকামীদেরকে দেবতা মনে করে পূজা শুরু করে দেয়।
আমরা এমন ভালোবাসাপূর্ণ জাতির মানসিকতাকে বোঝা, এর মূল্যায়ণ করা এবং তাদের পর্যন্ত
ইসলামের পয়গাম পৌঁছানো ছাড়া তাদেরকে অন্য জাতি বলে আখ্যায়িত করি। অথচ তাদের কাছে
তাদের হক পৌঁছানোর কোনো চিন্তা করি না।
তাদেরকে আপন মনে করে তাদের পর্যন্ত ইসলামের
পয়গাম পৌঁছিয়েছেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহ. ও অন্যান্য সফুয়ায়ে কেরাম। তাঁরা
এখানের স্থানীয় ভাষা না জানা এবং বিদেশ থেকে আসা সত্ত্বেও তাদের হক পৌঁছে দিয়েছেন।
ফলে ঐ জাতি তাদের এমন ভুয়সী প্রশংসা করেছে এবং তাদের ভালবাসার এমন প্রতিদান দিয়েছে
যে, আজ কয়েক শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পরও হিন্দু জাতি তাদেরকে মাথার মুকুট ও খাজা
মনে করে মোহাব্বত ও ভালোবাসার পুষ্পমালা অর্পণ করে থাকে।
আসুন!
আমরা এবার ভালোবাসার মিষ্টি বন্টনের
আনন্দ-অনুষ্ঠানে ভালোবাসাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভাইদেরকে নিমন্ত্রণ ও আমন্ত্রিত হওয়ার
প্রতিজ্ঞা করি। আর নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত জনদের মাঝে মিষ্টান্ন দ্রব্য
বিতরণের পাশাপাশি দেশীয় ভাই তথা হিন্দু ভাইদের কাছে ইসলাম ও ঈমানের মিষ্টি বন্টনের
আনন্দ উদযাপন করি।